বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে নাশকতাসহ নানা অপরাধমূলক ও সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় আট দিনে আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসব ঘটনায় মামলা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে ১২টি। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিমা ভাঙচুর, পূজার সামগ্রী চুরি, সন্দেহভাজনভাবে ঘোরাফেরা, পূজামণ্ডপে ঢিল ও পূজার টাকা নিয়ে মারামারির ঘটনাসংক্রান্ত মামলায় এসব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১ থেকে ৯ অক্টোবরের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এবার সারা দেশে ৩২ হাজার ৬৬৬টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। নিরাপত্তাঝুঁকি বিবেচনায় মণ্ডপগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ মণ্ডপ ১৩ হাজার ৬৩৯টি, গুরুত্বপূর্ণ ১০ হাজার ৯২৯টি ও অতি গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে ৮ হাজার ৯৮টি।
এসব মণ্ডপের নিরাপত্তার জন্য সারা দেশে ৭৫ হাজারের বেশি পুলিশ ও ২ লাখ ১২ হাজার ১৯২ আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে ছয়জন করে আনসার সদস্য এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে আটজন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত পূজামণ্ডপ ঘিরে ৪৬টি ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলা হয়। সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে ২১টি।
পূজামণ্ডপ ঘিরে ৪৭টি ঘটনার মধ্যে ৩০টি ভাঙচুর, ৪টি চুরি, ৩টি অগ্নিসংযোগ এবং অন্যান্য আরও ১০টি ঘটনা রয়েছে। এসব ঘটনায় মোট গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৯ জন।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ১৭টি ঘটনার মধ্যে ১ অক্টোবর রংপুরের কোতোয়ালিতে ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সুন্দরগঞ্জের ভাঙচুরের ঘটনায় ভবেশ চন্দ্র দাস নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বলছে, ভবেশ মানসিক ভারসাম্যহীন ও মাদকাসক্ত। বাঁশ দিয়ে আঘাত করে তিনি দুর্গা প্রতিমার মাথা ফুটো করে দেন।
২ অক্টোবর সুনামগঞ্জের দোয়ারবাজারে পূজামণ্ডপের সামনে নাচ-গানের সময় দুই পক্ষের মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় একটি জিডি হয়। এদিন পাবনার সুজানগরে পাঁচটি প্রতিমার মাথা ভাঙা অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। নড়াইল সদরেও এদিন একটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়।
৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ সদরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার করা হয়েছে।
৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জ সদরে পূজার টাকা নিয়ে মারামারির ঘটনায় মন্দিরের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। তখন দয়াল চন্দ্র সরকার ও অমিত মণ্ডল নামের দুজন মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এদিন বরিশালের বাকেরগঞ্জের একটি মন্দিরে প্রতিমার বিভিন্ন অংশ মেঝেতে ছড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়।
৬ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে প্রতিমার একটি অংশ ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিন নীলফামারীর ডিমলার সুখ সন্নাসির মাটির তৈরি ঢিবি ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। বাঁশঝাড়ে এ ঢিবিটি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি অথবা দুর্ঘটনামূলকভাবে ভেঙে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতেও প্রতিমার উদ্দেশে ইটের ভাঙা অংশ নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
৭ অক্টোবর খাগড়াছড়ির রামগড়ে মন্দিরের প্রতীক চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর পরের দিন রাজবাড়ী সদরের একটি মন্দিরে প্রতিমার মুখের সামান্য অংশ ভাঙার অভিযোগ পাওয়া যায়।
৮ অক্টোবর রাজবাড়ীর কালুখালীতে ভারী বর্ষণে মন্দিরের দেয়াল ও টিন পড়ে পরিতোষ প্রামাণিকের বাড়ির প্রতিমার মাথা ও হাত ভেঙে যায়। একই দিন সাতক্ষীরার আশাশুনিতে এক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি পূজামণ্ডপে ঢিল ছুড়লে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ বুধবার ৯ অক্টোবর রংপুরের গঙ্গাচড়া এলাকার পুটিমারি পশ্চিমপাড়ার সর্বজনীন দুর্গামন্দিরের সামনে সন্দেহভাজনভাবে ঘোরাফেরা করায় রফিকুল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার চৈতালী সংঘ পূজামণ্ডপের পাশের ড. রজত কান্তি ভট্টাচার্যের (৬৯) ঘরে রক্ষিত পতিললে প্রদীপদানি ও দানবক্স চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পূজার নিরাপত্তা ঘিরে অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে আছে। সোমবার পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম এনডিসি বলেন, ‘দুর্গাপূজা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নেই। তবুও আমরা সতর্ক থাকতে চাই। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কেউ অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মাহমুদুল হাসান, ঢাকা