দুবাইয়ের বৃষ্টি-সরণি

লেখা:দ্য ন্যাশনাল, দুবাই

0
167
দুবাইয়ের এই সড়কের নাম রেইনিং স্ট্রিট। তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ালেই এই সড়কে বৃষ্টি ঝরে

তপ্ত মরুর বুকে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। একটু যদি বৃষ্টি হতো! এমন অসহনীয় গরমে সত্যিই যদি বৃষ্টির হিম স্পর্শ বুলিয়ে যায়, কার না প্রাণ জুড়াবে! আর যদি মরুর বুকে সেই বৃষ্টি সারা বছরই আরামের আবহাওয়া তৈরি করে রাখে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। অবাক করা এমন পরিবেশই তৈরি করা হয়েছে মরুর শহর দুবাইয়ের একটি সড়কে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পরমাশ্চর্য সেই সড়কের নাম রাখা হয়েছে ‘রেইনিং স্ট্রিট অব দুবাই’ বা ‘দুবাইয়ের বৃষ্টি–সরণি’। নামই বলে দিচ্ছে এই সড়কে যখন–তখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি ঝরে। এই তথ্য অবাক হওয়ারই মতো। কারণ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মরুময় দেশে যেখানে বৃষ্টির জন্য তীব্র হাপিত্যেশ, সেখানে কীভাবে একটি সড়কে এভাবে বৃষ্টি হতে পারে।

বোঝাই যাচ্ছে, এই বৃষ্টি প্রকৃতির দান নয়, মানুষের সৃষ্টি। তাই তো প্রকৃতিতে শীত–গ্রীষ্ম যা–ই থাকুক না কেন, বৃষ্টি–সরণিতে গেলে নিশ্চিত দেখা মিলবে বৃষ্টির। আগত মানুষকে তা দেবে মরুর তপ্ত গরমে স্বস্তির পরশ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রাম বা ইউটিউবে ঢুঁ দিলে দুবাইয়ের এই বৃষ্টি–সরণির অসংখ্য ভিডিও চোখে পড়বে। এই রাস্তার দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার। ইউরোপীয় আদলে পথচারী চলাচলের জন্য রয়েছে ফুটপাত। কিছু দূর পরপর লাল আর সাদা রঙের ফোঁটা ফোঁটা ছাপ দেওয়া ছাউনি। কথা নেই বার্তা নেই, হঠাৎই ঝমঝম করে ঝরে পড়তে লাগল বৃষ্টির পশলা।

মরুর দেশে এই রাস্তা যেন এক টুকরা ভূস্বর্গ। এই অসম্ভব কাজ সম্ভব করেছে ক্লাইনডিয়েনস্ট গ্রুপ। তাদেরই মালিকানায় সে দেশে রয়েছে দুবাইয়ের কোর্ট দ্য আজুর মোনাকো হোটেল। ইউরোপীয় আদলে নির্মিত এ হোটেলের অবস্থান দুবাইয়ের ওয়ার্ল্ড আইল্যান্ডের কেন্দ্রে। শর্ত সাপেক্ষে এ রাস্তা সবার জন্য উন্মুক্ত।

রাস্তাটির তাপমাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মরুর বুকে চরম গরমে যখন কষ্টের সীমা ছাড়ায়, তখনো রাস্তাটির তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে স্থির করে রাখা হয়। আর্দ্রতা ধরে রাখা হয় ৬০ শতাংশে। প্রতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইয়ে দেওয়া হয় এই সড়কে।

ক্লাইনডিয়েনস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান জোসেফ ক্লাইনডিয়েনস্ট জানিয়েছেন, এখানে এমন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলেই বৃষ্টি ঝরতে থাকে। কিন্তু কীভাবে? এই রাস্তার প্রতিটি ভবনের ওপরে কিছু লুকানো নল স্থাপন করা আছে। সেসব নলে রয়েছে শীতল পানির ধারা। তাপমাত্রা বাড়লেই নলে জমে থাকা পানি বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে।

সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় এখন যে কেউ এই সড়কে গিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করতে পারেন। দুটি উপায়ে যাওয়া যায়। কোর্ট দ্য আজুর মোনাকো হোটেলের অতিথি হয়ে, নয়তো এক দিনের জন্য ওই সড়কে গিয়ে বৃষ্টি উপভোগের টিকিট কিনে। টিকিটের জন্য গুনতে হবে ৩০০ দিরহাম বা ৮১ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় ৮ হাজার ৬০০ টাকার কাছাকাছি।

এই বৃষ্টি–সরণি বানিয়ে দুবাইয়ে ইউরোপের পরিবেশ নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে। উদ্যোক্তারা চেয়েছেন, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে কাঠফাটা রোদে দর্শনার্থীরা এখানে এসে যাতে ইউরোপীয় আবহ উপভোগ করতে পারেন। ওই হোটেলের এক মুখপাত্র বললেন, এখন তো এই রাস্তায় বছরজুড়ে বৃষ্টি ঝরছে, একসময় তুষারপাতও হবে।

দুবাইয়ের বৃষ্টি–সরণির এই কৃত্রিম বর্ষণ চলে সৌরবিদ্যুতে। ইউরোপের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় এ রকম আরেকটি জায়গা রয়েছে। সেখানে রাস্তা নয়, আছে একটি কক্ষ। যেখানে বৃষ্টি ঝরে, নাম রেইন রুম বা বৃষ্টিকক্ষ। শারজা আর্ট ফাউন্ডেশনের এই কক্ষে বৃষ্টি ঝরার কারণে শীতল পরিবেশ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.