কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে গত দুই মাসে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছেড়েছে একটি চক্র। চক্রটি আরও দুই থেকে তিন কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। জাল নোট প্রস্তুতকারী ওই চক্রের মহাজনসহ ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।
সোমবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন– চক্রের মহাজনখ্যাত বাবুল মিয়া, তার স্ত্রী মিনারা খাতুন; মূল কারিগর সাইফুল ইসলাম, তার স্ত্রী মিলি খাতুন; মহিলা কারিগর আলপনা আক্তার, ইব্রাহিম, আফাজুল ওরফে রাসেল, হাবিবুল্লাহ ও দুলাল হোসেন। রোববার রাজধানীর লালবাগ কাশ্মীর এলাকা থেকে বাজারে ছাড়ার জন্য প্রস্তুত ৮২ লাখ টাকার জাল নোটসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গ্রেপ্তারদের মধ্যে বাবুল জাল টাকা নিয়ে এখন পর্যন্ত ছয় বার, তার স্ত্রী মিনারা খাতুন তিন বার এবং সাইফুল ইসলাম দুই বার বিভিন্ন মেয়াদে জেল হাজতে ছিলেন। জামিনে মুক্তি পেতে তাদের লাখ লাখ টাকা খরচ হয়। উচ্চ সুদে ধার নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে আবারও তারা একই কাজে জড়িয়ে পড়েন।’
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘চক্রটি এই জাল টাকারা নোট প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের মার্কেটে পেইড এজেন্ট রয়েছে। তাদের মাধ্যমেও চক্রটি জাল টাকা ছড়িয়ে দিত। এছাড়া তারা জেলে থেকেও জাল টাকার সিন্ডিকেট তৈরি করে। যারা জেল থেকে বের হয়ে পরে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করে। এছাড়া মহাজন এসব জাল নোট বিক্রির টাকা দিয়ে গাড়ি-বাড়ি করেছেন। শুধু তাই নয়, একাধিক বিয়ে করেছেন। পরবর্তীতে তাদের দিয়েও জাল নোট তৈরির ব্যবসা শুরু করেন।’
হারুন বলেন, ‘গোয়েন্দা সূত্র ধরে প্রথমে ইব্রাহিম, আফাজুল ওরফে রাসেল, হাবিবুল্লাহ ও দুলাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কাশ্মীর লেনের একটি জাল টাকার কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে জাল টাকা তৈরিরত অবস্থায় কারখানার মহাজন বাবুল মিয়াসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। ঘরোয়া কারখানা থেকে জাল টাকা তৈরির কাজে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, প্রিন্টার, জলছাপ যুক্ত বিশেষ কাগজ, বিভিন্ন রকমের মনোগ্রাম সম্বলিত স্ক্রিন, ডাইস, বিভিন্ন রঙের কালি, কাগজ কাটার যন্ত্র, কাচি, চাকুসহ দুই কোটি জাল টাকা তৈরি করার উপযোগী সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।’
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে। চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্য সদস্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য তাদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান হারুন।