দ্রব্যমূল্য ও সিন্ডিকেট ইস্যুতে সংসদে তোপে বাণিজ্যমন্ত্রী

0
141
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বাজার সিন্ডিকেটের প্রভাব নিয়ে বৃহস্পতিবার সংসদ বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কড়া সমালোচনা করেছেন বিরোধীদলীয় এমপিরা। তারা বলেছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নাম এলেই অস্বস্তিতে পড়তে হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো বোঝেন; সিন্ডিকেটও ভালো বোঝেন। এ জন্যই সিন্ডিকেটে হাত দিলে পুড়ে যাবেন বলেন। সংসদে তিনি ‘বাণিজ্য সংগঠন বিল’ না করে ‘বাণিজ্য সিন্ডিকেট আইন’ করলে ভালো হতো বলেও কটাক্ষ করা হয়।

ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে সংসদ বৈঠকে ‘বাণিজ্য সংগঠন (সংশোধন) বিল’ পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী সদস্যরা কড়া সমালোচনা করলে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বাজার সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব স্বীকার করে নেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এ দামে পাওয়া না গেলে দু-এক দিনের মধ্যে ডিম আমদানি করা হবে।

বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নাম এলেই অস্বস্তিতে পড়তে হয়। ঈদের আগে কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ ও আদার দাম কত গুণ বেড়েছিল? বৃদ্ধির কোনো কারণ ছিল না। এসব জিনিস রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে আসে না। আলুর মজুত পর্যাপ্ত থাকার পরও দাম বেড়েছে। একটিই কারণ, সিন্ডিকেট। তারা এক-একটি জিনিস টার্গেট করে মানুষের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়। বাণিজ্যমন্ত্রী নিজে ব্যবসায়ী, ব্যবসা ভালো বোঝেন। সংসদে দাঁড়িয়ে বহুবার সিন্ডিকেটের কথা অস্বীকার করেছেন। মানুষ তাঁকেই সিন্ডিকেটের হোতা বললে সত্য স্বীকার করে সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না বলেছেন। সরকারের অন্তিম লগ্নে পদত্যাগ দাবি করছি না। আমার মনে হয়, যোগ্যতা না থাকলে তিনি পাঁচ বছর থাকতে পারতেন না।

জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমাম বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসা ও রাজনীতিতে সফল ব্যক্তি বলে কটাক্ষ করেন। দলটির আরেক এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সস্তায় পাওয়া আমিষগুলোর দামও অনেক। ২০২১ সালে যে পাঙাশ ১১১ টাকা কেজি, এখন তা ২০০-২৫০ টাকা। সিন্ডিকেটের কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়।

জাতীয় পার্টির সদস্য রওশন আরা মান্নানের অভিযোগ, ‘কতিপয় ব্যবসায়ী নিজের লাভের জন্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ান।’ এক বছরের তুলনামূলক দর তুলে ধরে সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, এক বছর আগে চিনি ছিল ৮৮-৯০ টাকা কেজি, এখন ১৩০-১৩৫; ডিমের হালি ছিল ৪০-৪২, এখন ৪৮-৫২ টাকা; রসুনের দাম বেড়েছে ২২৯ শতাংশ।

জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ টিপ্পনী কাটেন, ‘বাণিজ্য সংগঠন বিল’ না করে মন্ত্রী ‘বাণিজ্য সিন্ডিকেট আইন’ করলে ভালো হতো। সিন্ডিকেট না ভাঙা পর্যন্ত দ্রব্যমূল্য কমবে না। আজ গরুর মাংস ৮০০ টাকা কেজি। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরার খবর দেখি, বাজারে গেলে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকার নিচে মেলে না। আসলে বাণিজ্যমন্ত্রীর দোষ দিয়ে কী লাভ? তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, এগুলো ভালো বোঝেন; সিন্ডিকেটটাও ভালো বোঝেন। সেজন্যই বলেছেন, সিন্ডিকেটে হাত দিলে তিনি পুড়ে যাবেন।

সমালোচনার জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জিনিসপত্রের দাম ও সিন্ডিকেট নিয়ে আলোচনায় আমাকে সিন্ডিকেট লিডার বলা হয়েছে। ব্যবসায়ী হওয়ার অনেক আগে থেকেই আমি রাজনীতি করি। রাজনীতির ২০ বছর পরে এসে ব্যবসা শুরু করেছি। ব্যবসা করা অপরাধ হলে আমি সেই অপরাধে অপরাধী। ব্যবসা না করলে এদিক-সেদিক থেকে চাঁদা তুলে আমাকে বাঁচতে হতো। তবে আমি যে ব্যবসা করি, দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়; আমি বিদেশে রপ্তানি করি।

বৈশ্বিক কারণে দাম বৃদ্ধি এবং কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে উৎপাদিত দ্রব্য কখনও কখনও বাড়ে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, হঠাৎ হঠাৎ ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেন। ডিম বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তৈরি করে না, এর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। লাখ লাখ ডিম উৎপাদনকারীকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করব কীভাবে? তবে আজ আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে পেঁয়াজ ও আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। এটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করব।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবকিছুর খোঁজখবর নিচ্ছেন। কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলেছেন। আমরা সংসদ সদস্যদেরও সহযোগিতা চাই।

পরে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে এটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। নির্ধারিত সময়ে বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাচন করা না গেলে অতিরিক্ত ছয় মাস সময় পাওয়া যায়। বিল সংশোধনীতে এ সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.