দুই ঘাটের নড়বড়ে দুটি সাঁকো দিয়ে চলাচল

0
150
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া নলশীসা নদীর ওপর নির্মিত নড়বড়ে সাঁকো। সম্প্রতি তোলা ছবি

নলশীসা নদীর লালঘাট ও সদরঘাটে কোনো সেতু নেই। এতে দিনাজপুরের বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

দিনাজপুরের বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে নলশীসা নদী। গ্রীষ্ম ও বর্ষায় নদীর দুই পাড়ের মানুষ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে গ্রাম থেকে শহরে আর শহর থেকে গ্রামে যাওয়া-আসা করেন। নদীর দুই পাড়ে বাস করেন ১৭ গ্রামের অর্ধলাখ মানুষ। কিন্তু নদী পারাপারের জন্য নেই কোনো সেতু। দুই ঘাটের নড়বড়ে দুটি সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করেন তাঁরা। কিন্তু সাঁকোতে কোনো গাড়ি চলাচল না করায় তাঁরা নিত্যদিন ভোগান্তি পোহান।

স্থানীয় সূত্র জানায়, লালঘাটের পূর্ব পাশে নবাবগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের মহিষবাতান, রঘুনাথপুর, লাইকারচড়া, পাদমপুর, হরিপুর, বস্তাপাড়া, মণ্ডলচাঁদ গ্রাম এবং পশ্চিম পাশে বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের সোনাঝুড়ি, দীঘলচাঁদ, ঘোড়াপাথর, নটকুমারি, করমতলি ও রতনপুর গ্রাম। লালঘাট এলাকার নলশীসা নদীর দুই পাড়ের ওই ১৩ গ্রামের মানুষ এখন একটি জরাজীর্ণ সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করছেন।

লালঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে সদরঘাট। এখানে নলশীসা নদী পারাপারের জন্য একটি নড়বড়ে সাঁকো আছে। সদরঘাটের পূর্ব পাশে পাদমপুর, গরীবপাড়া, বস্তাপাড়ার একাংশ, হরিপুর এবং পশ্চিম পাশে ধানঝুড়ি, নেটাশন, বটতলি ও ধাকন্দ গ্রাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নলশীসা নদীর দুই পাড়ে ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর। তাঁদের পারাপারের একমাত্র মাধ্যম নদীতে বাঁশের সাঁকো।

সরেজমিন দেখা গেছে, নলশীসা নদীর ওপরে লালঘাট ও সদরঘাটে প্রায় ৬০ মিটার দীর্ঘ বাঁশ ও কাঠের তৈরি দুইটি নড়বড়ে সাঁকো।

সাঁকো পারাপারের সময় সাঁকোতে পা রাখতেই সাঁকো দুলতে থাকে। যে সাঁকো দিয়ে হেঁটে চলাচল করায়ই ঝুঁকির, সেখানে মোটরসাইকেল বা যাত্রীবাহী ভ্যান নিয়ে চলাচল করা আরও কঠিন। সাঁকো তৈরির উপকরণ বাঁশ ও কাঠ হওয়ায় বছর না যেতেই সাঁকোর খুঁটি ও পাটাতনগুলো ভেঙে যায়। জরুরি প্রয়োজনে কেউ রিকশা–ভ্যানে সাঁকো পারাপার হলে সাঁকোর মাথায় যাত্রী নামিয়ে দিয়ে রিকশা–ভ্যান ঠেলে পার করতে হয়। পরে আবার অপর মাথায় গিয়ে যাত্রীকে উঠাতে হয়।

লালঘাট সাঁকোর পশ্চিম পাড়ের দীঘলচাঁদ গ্রামের সালোমী মুরমু বলেন, ‘গেল বৈশাখ মাসোত হামার ভাই আর ভাবি আলুর বস্তা নিয়ে ভ্যানোত করে এই সাঁকো দিয়ে পার হবার সময় সাঁকো ভাঙে পানিত পড়ে ডুবে গেছিলো। বর্ষাকালোত নদীত নাও ডুবে যায়।’

পাদমপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, দাপ্তরিক ও ব্যবসায়িক কাজে গ্রাম থেকে সাঁকোর ওপর দিয়ে রতনপুর হয়ে বিরামপুর ও ফুলবাড়ী উপজেলায় যেতে হয়। শুকনা মৌসুমে সাঁকো দিয়ে যাওয়া-আসা করা গেলেও বর্ষাকালে খুব ভোগান্তি হয়।

দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক জানান, ‘ নেটাশন ঘাটে (সদরঘাট) প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণের জন্য এলজিআরডি মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। তবে নেটাশন ঘাট দিয়ে লোকজনের চলাচল কম হওয়ায় লালঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য আবারও একটি ডিও লেটার দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগির সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’

বিরামপুর উপজেলা প্রকৌশলী আতাউর রহমান বলেন, ‘নেটাশন ঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য সেখানের মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এলজিইডির জেলা কার্যালয় উপজেলা কার্যালয় থেকে একটি প্রাক্কলন চেয়েছে। সেটি অনুমোদন হলেই সেতু নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.