কক্সবাজারে দুইদিনের ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে টেকনাফের বেশ কয়েকটি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সেখানকার অন্তত আড়াই হাজার পরিবার। সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কা। প্রাণহানি রোধে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করছে উপজেলা প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৮ জুন) সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণে প্লাবিত হয়ে গেছে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার, ওয়াব্রাং, চৌধুরী পাড়া, রঙ্গিখালী লামার পাড়া, চৌধুরী পাড়া, সাবরাং ইউনিয়নের পতে আলী পাড়া, বাহারছাড়া পাড়া, কুড়া বুইজ্জ্যাপাড়া, মুন্ডার ডেইল পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন গ্রামগুলোতে বসবাসকারী আড়াই হাজার পরিবারের ছয় হাজারেরও বেশি মানুষ। পাশাপাশি টেকনাফ পৌরসভার ১২টি স্পটে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে ২০ হাজার মানুষ।
পুরাতন পল্লানপাড়া পাহাড়ের ঢালে বসবাসকারী রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ভয়ে আছি। নির্ঘুম রাত কাটছে। বুধবার দুপুর থেকে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।’
বাহারছাড়া পাড়ার বাসিন্দা শওকত বলেন, ঘরে পানি ঢুকে রান্নার চুলাসহ সবকিছু তলিয়ে গেছে। সকাল থেকে শুধু মুড়ি খেয়ে দিন পার করছি। আশপাশের সবার ঘরবাড়ি ডুবে গেছে।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, ভারী বর্ষণে আমার এলাকার চারটি গ্রামের তিন হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মূলত সীমান্ত সড়কের স্লুইসগেট থেকে বৃষ্টির পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে বের হতে না পারায় এসব এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান জানান, দুইদিনের বৃষ্টিতে কলেজপাড়া, শীলবুনিয়া পাড়া, ডেইলপাড়া, জালিয়াপাড়া, খানকারডেইল, চৌধুরীপাড়া, কেকে পাড়াসহ পৌরসভার ৭ গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি। পানিতে ডুবে আছে টেকনাফ কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর হোছাইন জানান, শাহপরীর দ্বীপের ৭ গ্রামসহ সাবরাং ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জানান, তার এলাকার লম্বা বিল, উলুবনিয়া, আমতলি, মিনাবাজার, উনচিপ্রাং, কাঞ্চনপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, রইক্ষ্যং গ্রাম প্লাবিত হয়ে গেছে।
বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন জানান, তার ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের বাসিন্দা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে ১০টি গ্রাম। এতে করে তার ইউনিয়নের এক হাজার পরিবার খুব খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণে এখানকার বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি বৃষ্টি না থামায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই সকাল থেকে পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হচ্ছে। জানমালের নিরাপত্তায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।