দিল্লির সন্ধ্যায় সুজনের বোমা

0
139
খালেদ মাহমুদ সুজন

গল্পগাথার বেহুলার লোহার বাসরঘরের মতোই নিজের দলকে বিশ্বকাপের শুরু থেকে নিশ্ছিদ্র রেখেছিলেন সাকিব আল হাসান। দলের ভেতরের খবর যাতে কোনোভাবেই বাইরে না যায়, তার জন্য টিমবয়কে পর্যন্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই ঘরেই যেন সাপ ঢুকে পড়ল!

বিশ্বকাপে টিম লিডার হয়ে আসা খালেদ মাহমুদ সুজনই বলে দিলেন দলের ভেতর কী হচ্ছে– কিছুই জানেন না তিনি। কোনো সিদ্ধান্তে রাখা হয় না তাঁকে। আগে জানলে এই ভূমিকা পালন করতে তিনি আসতেন না। শুধু সুজন নন, এর আগে টিম মিটিংয়ের ভিডিও ফাঁস হয়েছে। দলের মধ্যে থেকেই কেউ সেই ভিডিও পাঠান ঢাকায়, যা ইঙ্গিত করে– দলের মধ্যে সাকিবের নিয়ন্ত্রণ কিছুটা আলগা হয়ে গেছে। তা না হলে গতকাল দিল্লির শান্ত সন্ধ্যায় খালেদ মাহমুদ সুজন যে বোমা ফাটিয়েছেন, সেটা হতো না।

এই খালেদ মাহমুদ সুজনই বিশ্বকাপ ছাড়ার আগে বলেছিলেন, বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলবে। এদিন সে কথা মনে করিয়ে দিতেই গুটিয়ে গেলেন টিম লিডার। ‘কোন চিন্তা করে যে এ কথা বলেছিলাম, তা বুঝতে পারছি না। অনেক দিন ধরে তো বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আছি। ছেলেদের শরীরী ভাষা দেখে আশা ছিল, এবারের বিশ্বকাপে খুব ভালো করব। সেটা না পারায় ভীষণ খারাপ লাগছে। সেমিফাইনাল না খেললেও আমরা যদি ৬ নম্বর বা ৭ নম্বর টিমও হই; এমনকি ১০ নম্বর টিমও যদি হই, কিন্তু লড়াই করার মানসিকতা আমি খুঁজে পাইনি।’

আগের বিশ্বকাপগুলোতে দলের সঙ্গে যে ভূমিকায় ছিলেন তিনি, এবার তাঁর সেই কর্মকাণ্ড আগেই ছেঁটে ফেলা হয়েছে। ভেতরের খবর হলো, কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে চাননি তাঁকে। তার পরও বিসিবি সভাপতি অনেক শর্ত প্রযোজ্যের পর দলের সঙ্গে পাঠিয়েছেন তাঁকে। ক্ষোভটা তাই সুজনের একটু বেশিই। ‘আগে প্রতি ট্যুরে দল নির্বাচন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমার যে ভূমিকা থাকত, সেটা এবার হচ্ছে না। এখন আমার দলে ক্রিকেটীয় ভূমিকা নেই। আমি তো এভাবে থাকতে চাই না। যেহেতু আমার রক্তে ক্রিকেট, আমি কোচিং করি, এটা আমার পেশা। যদিও বাংলাদেশ দলের কোচিংয়ের সঙ্গে আমি জড়িত নই, তবে একজন টেকনিক্যাল মানুষ হিসেবে গত টি২০ বিশ্বকাপেও যেভাবে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমার কথা হতো, সেটা এবার হচ্ছে না। বোর্ড থেকে আমাকে এবার সে ভূমিকা দেওয়া হয়নি। এভাবে দলের সঙ্গে থাকা অবশ্যই আমি উপভোগ করছি না। এটা আমার ভূমিকা না, আমি অভিভাবক হিসেবে থাকব, ঘুরব, দলের শৃঙ্খলার মতো বিষয় দেখব। কিন্তু এগুলো তো আমার কাজ না। এটাও আমার কাজ ছিল। তবে এগুলোর সঙ্গে আমি ক্রিকেটীয় বিষয়গুলোও দেখতাম।’

দলের আবহ যে ভালো নেই, তা তিনি না বললেও সবাই জানে। তার পরও সুজনই বললেন, ‘দলের আবহ ভালো নেই। তার পরও বিশ্বকাপের দুটি ম্যাচ বাকি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবারের আসর থেকে পাওয়ার মতো ওই একটি জিনিসই এখন আছে। আমরাও বুঝতে পারছি না, কেন এতটা খারাপ হলো। কোনো ব্যাখ্যা আমাদের কাছে নেই। নিজেদের সামর্থ্যের ২৫ শতাংশও আমরা খেলতে পারিনি। আমরা সবাই স্তব্ধ। আমি কবে বাংলাদেশের এমন পারফরম্যান্স দেখেছি, সত্যিই বলতে আমার মনে নেই।’

মনের কথা আলগা করার একটা শান্তি যেন খুঁজে পাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সাকিবের সেই লোহার ঘরেও যে এখন ফুটো বেরিয়ে পড়েছে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.