ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির টাকা নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না দিনমজুর সাজেদুল ইসলামকে। ইতিমধ্যে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনেকেই আশ্বাস দিয়েছেন।
আজ রোববার বিকেল চারটার দিকে রংপুরের জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীন তাঁর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে সাজেদুলের হাতে ২০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন। এ সময় সাজেদুলের পরিবারের খোঁজখবর নেন জেলা প্রশাসক এবং দিনমজুরি করে পড়াশোনা অব্যাহত রাখায় সাজেদুলের প্রশংসাও করেন তিনি।
ওই চেক প্রদান অনুষ্ঠানে বদরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সাঈদসহ জেলা প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, ‘সাজেদুল অনেক গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থী। তাঁর সংগ্রামী ও কষ্টময় জীবন নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন পড়েছি। এ কারণে তাঁর পড়াশোনায় সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছি। পরে যেকোনো সমস্যায় তাঁকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলেছি।’
সাজেদুলের ভর্তির ব্যবস্থাসহ তাঁর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন ইনবক্স আইটি সলিউশনস লিমিটেডের সিইও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবু সায়েম। আবু সায়েম বলেন, ‘সাজেদুলের পড়াশোনায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেব।’
বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী ও ইউএনও আবু সাঈদ উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাজেদুলকে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় জাতীয় ছাত্রসমাজের সভাপতি আল মামুনও ফোন করে সাজেদুলের ভর্তিসহ পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ও মকবুল গাজী নামের ঢাকার এক ব্যক্তি সাজেদুলের পাশে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন।
সাজেদুলের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের খিয়ারপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবা জাহিদুল হক ইটভাটার মৌসুমি শ্রমিক। মা শারজিনা বেগম গৃহিণী। ১ শতাংশ বসতভিটা ছাড়া অন্য কোনো জমি নেই। সাজেদুল দিনমজুরি করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে গত বছর স্থানীয় লালদীঘি পীরপাল কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এবারে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বি ইউনিটে মেধাতালিকায় ৭৩১তম হয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বি ইউনিটে ১৬৯তম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ইউনিটে ৩৪৬তম হয়েছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির গুচ্ছ পরীক্ষায় ১১৫তম হয়েছেন সাজেদুল।
সাজেদুল রোববার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ পড়াশোনার খরচ বহন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর সেই চিন্তা নেই। রংপুরের জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে ভর্তির টাকা এবং অনেকে আমার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, দোয়া চাই। সব পত্রিকার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ, আমার সমস্যা নিয়ে খবর না ছাপলে টাকার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ পড়াশোনার চালানোটা সম্ভব ছিল না। পড়াশোনা করে আমি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।’