দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওলকে অভিশংসন করে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দ্বায়িত্ব পালন করবেন হান ডাক-সু।
এ অবস্থায় দেশটির সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিশংসন ভোটাভুটির ফল আসার পরেই প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী হানের দীর্ঘ রাজনৈতিক ও কর্মমুখী ক্যারিয়ার রয়েছে। বিস্তৃত অভিজ্ঞতা এবং যৌক্তিকতার জন্য খ্যাতি রয়েছে তার। পক্ষপাতদুষ্ট বাগাড়ম্বরে তীব্রভাবে বিভক্ত দেশে তিনি এমন একজন কর্মকর্তা, যার বৈচিত্র্যময় প্রভাব দলের বাইরেও রয়েছে।
তবে চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে চলা সরকারকে সচল রাখার মতো গুরু দায়িত্বটা চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার হুমকি এবং দেশের ধীরগতির অর্থনীতি আরও সচল করা।
আদালত ইয়ুনকে অপসারণ বা তার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের ভূমিকা কয়েক মাস ধরে চলবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইয়ুনকে অপসারণের পর ৬০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে। ততদিন পর্যন্ত হান ক্ষমতায় থাকবেন।
মধ্যপন্থী ও যুক্তিবাদী
৭৫ বছর বয়সী হান রক্ষণশীল ও উদারপন্থী পাঁচজন ভিন্ন প্রেসিডেন্টের অধীনে নেতৃত্বস্থানীয় পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত, অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, নীতি-সমন্বয় বিষয়ক প্রেসিডেন্সিয়াল সেক্রেটারি, প্রধানমন্ত্রী, ওইসিডিতে রাষ্ট্রদূত এবং বিভিন্ন থিংক-ট্যাংক ও সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অর্থনীতিতে হার্ভার্ড ডক্টরেট হানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও কূটনীতিতে দক্ষতার পাশাপাশি যৌক্তিকতা, মধ্যপন্থী আচরণ এবং কঠোর পরিশ্রমের জন্য খ্যাতি রয়েছে। যা তাকে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে সুপরিচিত মানুষ করে তুলেছে।
২০২২ সালে হানকে নিয়োগ দেওয়ার সময় অভিশংসিত প্রেসিডেরন্ট ইয়ুন বলেছিলেন, আমি মনে করি হান মন্ত্রিসভার তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করার সময় জাতীয় বিষয়গুলো পরিচালনা করার জন্য সঠিক প্রার্থী। সরকারি ও বেসরকারি খাতে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে হানের। মার্কিন-দক্ষিণ কোরিয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়ায় গভীরভাবে জড়িত ছিলেন তিনি।
হান সৌদি আরামকোর দক্ষিণ কোরিয়ার পরিশোধন ইউনিট এস-অয়েলের বোর্ড সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন।
ইউনকে অভিশংসনের নেপথ্যে
গত ৩ ডিসেম্বর উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি থেকে মুক্ত কোরিয়া প্রজাতন্ত্র রক্ষা, জনগণের স্বাধীনতা ও সুখ লুণ্ঠনকারী ঘৃণ্য উত্তর কোরিয়াপন্থী রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোকে নির্মূল এবং উদার সাংবিধানিক সুরক্ষার ঘোষণা দিয়ে হঠাৎ করে দেশজুড়ে সামরিক আইন জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল।
যদিও বিরোধীদের তীব্র আপত্তি ও সংসদে ভোটাভুটির পর মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে সেই সামরিক আইন প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। পরে দক্ষিণ কোরিয়ার এই প্রেসিডেন্টের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত চলমান আছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ইউনের নিযুক্ত করা দেশটির প্রধানমন্ত্রী হ্যান ডাক-সু এখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন। সংসদে অভিশংসিত হলেও জটিল আইনি প্রক্রিয়ার কারণে প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন ইউন। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনও নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে না তার।