ত্রুটিপূর্ণ সংবিধান সংস্কারে দরকার গণপরিষদ নির্বাচন: নাহিদ

0
5
এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, ত্রুটিপূর্ণ সংবিধান সংস্কারে দরকার গণপরিষদ নির্বাচন।

সোমবার (২৪ মার্চ) রাজধানীতে বিদেশি মিশনের কূটনীতিকদের নিয়ে এনসিপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, কেবল নতুন সংবিধানের মাধ্যমেই আমরা একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করতে পারি। বিদ্যমান সংবিধান ত্রুটিপূর্ণ, এটি সংস্কারে দরকার গণপরিষদ নির্বাচন।

তিনি আরও বলেন, এনসিপি তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তা হচ্ছে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, রাষ্ট্রের সংস্কার ও সংবিধান সংস্কারের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন।

এনসিপি একটি দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের স্বপ্ন দেখে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের সংস্কার এজেন্ডা উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তবে প্রয়োজনীয়। আমাদের লক্ষ্য বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভেঙে ফেলা এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে মৌলিকভাবে পুনর্গঠন করা।

ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের এনসিপির সঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা জানি এই যাত্রা কঠিন হবে, তবে আমরা এটাও জানি যে বাংলাদেশ প্রস্তুত। আমাদের জনগণ কেবল পরিবর্তনই নয়, বরং একটি মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ চায়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি জাতি যা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। ১৯৪৭ সালের উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত, আমাদের জনগণের প্রতিটি প্রজন্ম স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছে। আমরা আজ এখানে সেই ইতিহাসের উত্তরাধিকারী হিসেবে এবং তার অসম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি পূরণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ একটি নতুন প্রজন্ম হিসেবে দাঁড়িয়ে আছি।

গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চলমান, নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক বলেন, আমাদের চোখের সামনে যে মানবিক সংকট দেখা দিচ্ছে তা আমাদের সম্মিলিত বিবেকের ওপর একটি কলঙ্ক। আমরা বিশ্বাস করি প্রতিটি জাতি, প্রতিটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক শক্তির এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবিক চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি। বাংলাদেশ প্রায় দশ লক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে অপরিসীম উদারতা দেখিয়েছে কিন্তু এটি একা এই বোঝা বহন করতে পারে না এবং করা উচিত নয়। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করে একটি টেকসই, মর্যাদাপূর্ণ সমাধানের প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানাই।

তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলে শেকড় গেড়ে থাকা একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে, আমরা বিশ্বাস করি যে দক্ষিণ এশিয়ার মর্যাদা, ন্যায়বিচার, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা সম্পর্ক প্রয়োজন। যেখানে কোনো দেশই আধিপত্য বোধ করে না এবং প্রতিটি জাতির সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা হয়।’

গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত দেখেছিল মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ছাত্র, নারী, শ্রমিক, নাগরিক জীবনের প্রতিটি স্তরের মানুষ তাদের দেশের জন্য জেগে উঠেছিল। এটি ছিল আমাদের সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বিদ্রোহগুলির মধ্যে একটি, যা একটি নতুন রাজনৈতিক সমাধানের সহজ কিন্তু গভীর দাবি দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। তাদের অসাধারণ সাহসিকতা পূর্ববর্তী শাসনামলে বছরের পর বছর ধরে চলা পদ্ধতিগত নিপীড়ন এবং অধিকার অস্বীকারের মধ্য দিয়ে উদ্ভূত হয়েছিল; বলপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, পদ্ধতিগত দুর্নীতি এবং সংবিধানের মধ্যেই গভীরভাবে প্রোথিত কাঠামোগত বৈষম্য। এই নৃশংসতাগুলো স্পষ্টভাবে নথিভুক্ত এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.