গত রোববার ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর বৈঠকে বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব দিনে ১০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা দিলে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেল ও গ্যাস—উভয়েরই দাম বাড়ে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক সংবাদে বলা হয়েছে, যে আলোচনার ভিত্তিতে সৌদি আরব এই সিদ্ধান্ত নিল, তাতে বোঝা যায়, অপরিশোধিত তেল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে একধরনের উত্তেজনা আছে। বিশেষ করে যেভাবে তাদের মধ্যে তেল উৎপাদন কোটার জটিল বিন্যাস হলো, তাতে এক কঠিন সমীকরণের আভাস পাওয়া গেল। এ কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম একধরনের ভারসাম্যের মধ্যে আছে।
দেখা যাচ্ছে, সৌদি আরব এককভাবে তেল উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা দিল। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাত নিজেদের তেল উৎপাদনের কোটা বাড়িয়েছে, সে জন্য তারা অনেক দিন ধরে দেনদরবার করে আসছিল। আবার অন্য দেশগুলোর তেল উৎপাদনের কোটা কমেছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, রোববার ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে যে বৈঠক হলো, তার আগে অনেক আলোচনা হয়েছে। সেই বৈঠককে ওপেকের ইতিহাসের অন্যতম ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ বৈঠক হিসেবে আখ্যা দিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।
এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উৎপাদনের কোটা বৃদ্ধিতে আফ্রিকার দেশগুলো আবার অখুশি।
রোববার ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর বৈঠকে যে বন্দোবস্ত হলো, তা মূলত সৌদি আরবের নেতৃত্বে হয়েছে। সৌদি যুবরাজ আবদুল আজিজ বিন সালমান যাকে ‘সৌদি ললিপপ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, যার বদৌলতে তেল ব্যবসায়ীদের মুনাফা বাড়বে। তবে সৌদি আরবের উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা কেবল জুলাই মাসের জন্য, পরে তা বাড়তেও পারে।
আলোচনার সময় যে বিষয়টি সবার মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে তা হলো, তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে কমে যাওয়া। এই প্রতিবেদন লেখার সময় ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৭৫ ডলার, অথচ ১ বছর আগে এই তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ১২০ ডলার।
মোদ্দাকথা, তেলের দাম বাড়াতে যা দরকার সৌদি আরব তা–ই করবে। আরবিসি গ্লোবাল মার্কেটসের বৈশ্বিক পণ্য কৌশল বিভাগের প্রধান হেলিমা ক্রফট বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে এক নোটে লিখেছেন, সৌদি আরব যে এককভাবে দাম বাড়ানোর দায়িত্ব নিতে চাইছে, তাতে বোঝা যায় যে উৎপাদন হ্রাসের বিষয়টি কতটা বিশ্বাসযোগ্য। বোঝা যাচ্ছে, বাজারে সরবরাহ কমবে।
বিশ্লেষকদের হিসাব, সৌদি আরবের বাজেট–ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উচ্চাভিলাষী অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে অপরিশোধিত তেলের দর প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারের ওপরে রাখতে হবে।
যদিও গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এসব করে সৌদি আরব তেলের দাম বড়জোর এক থেকে ছয় ডলার বাড়তে পারে। কিন্তু তাতে ভোক্তাদের তেমন কিছু আসবে যাবে না, অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসোলিনের দাম সে কারণে রাজনৈতিকভাবে হুমকিতে পড়বে না। কারণ, সে দেশের পাম্পগুলোতে তেলের দাম এমনিতেই গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম।
এদিকে রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশটি যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি চাঙা রাখতে বাজারে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল ছাড়ছে। এর ফলে বাজারে তেলের অভাব হচ্ছে না। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথগতির কারণে, বিশেষ করে চীনের শ্লথগতির কারণে তেলের তেমন দাম বাড়ছে না।