তৃণমূলকে আজ নির্বাচনী বার্তা দেবে আওয়ামী লীগ

0
144

মাঠের নেতাদের ‘চাঙা’ করতে আজ রোববার গণভবনে বসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা। জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিএনপিসহ বিরোধীদের সরকারবিরোধী আন্দোলন ও নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের জোরালো তৎপরতা—এই ত্রিমুখী রাজনৈতিক বাস্তবতায় দলের সর্বস্তরের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ঢাকায় ডাকা হলো।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ ছাড়া জয় পাওয়া কঠিন হবে। আবার বিএনপি ভোট ঠেকাতে চাইলে সে ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগের মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন। ফলে রাজপথ ও ভোটের মাঠ—দুটোতেই জয় চাইলে দলকে অতীতের চেয়ে এখন আরও বেশি সংগঠিত হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য মাঠের নেতাদের উজ্জীবিত করতে এবং নির্বাচনী বার্তা দিতে আজকের বৈঠক ডাকা হয়েছে।

ভোটের আগে তৃণমূলের নেতারা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা পেতে উদ্‌গ্রীব হয়ে আছেন। তাঁরাও নেত্রীকে কাছে পেয়ে মন খুলে কথা বলবেন। আসলে দলকে আরও সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যেই এই বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে।

এস এম কামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, গত ১৫ বছরের টানা শাসনামলে আওয়ামী লীগের ভেতরে, তৃণমূলে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছে। তৃণমূলের অনেক নেতার দুঃখ কিংবা হতাশা থাকতে পারে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সামনে তা প্রকাশ করতে পারলে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হবে। কোথাও হস্তক্ষেপের দরকার হলে সে ব্যাপারও ওই বৈঠকেই আলোচনায় আসতে পারে। এ জন্য বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর তৎপরতা ও আগামী নির্বাচন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক অপপ্রচার আছে, যা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্তিতে ফেলছে। এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৫ বছরে সরকারের উন্নয়ন-অর্জনও বিপুল। এই উন্নয়নের প্রচার ও অপপ্রচারের জবাব দেওয়ার বিষয়েও দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল বলেন, ভোটের আগে তৃণমূলের নেতারা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা পেতে উদ্‌গ্রীব হয়ে আছেন। তাঁরাও নেত্রীকে কাছে পেয়ে মন খুলে কথা বলবেন। আসলে দলকে আরও সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যেই এই বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে।

আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এই বিশেষ বর্ধিত সভা হবে। সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি জেলা/মহানগর ও উপজেলা/থানা/পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা অংশ নেবেন। আরও থাকবেন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। জাতীয় সংসদের দলীয় সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যানরা, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়ররাও এতে অংশ নেবেন। সব মিলিয়ে গণভবনে প্রায় তিন হাজার মানুষের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ গতকাল শনিবার রাতে বলেন, তিনি ঢাকায় পৌঁছে গেছেন। সারা দেশের নেতারা এই সভা থেকে নতুন শক্তি নিয়ে বাড়ি যাবেন বলে তিনি মনে করেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, গত ১৫ বছরের টানা শাসনামলে আওয়ামী লীগের ভেতরে, তৃণমূলে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছে। তৃণমূলের অনেক নেতার দুঃখ কিংবা হতাশা থাকতে পারে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সামনে তা প্রকাশ করতে পারলে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হবে।

আওয়ামী লীগের অন্য একাধিক নেতা জানান, সভায় চারটি বিষয় সামনে রেখে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। বৈঠকে সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে সারা দেশে দলের কোনো শাখায় নতুন করে সম্মেলন না করার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত দলের কর্মসূচিগুলো কীভাবে পালন করা হবে, তা নিয়েও কথা হবে। জাতীয় নির্বাচনে কোন্দল ভুলে একক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ঢাকার বাইরে নির্বাচনী জনসভার বিষয়েও আলোচনা হবে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৭ সালে গণভবনে তৃণমূলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে প্রতিনিধি সম্মেলন করেছিল আওয়ামী লীগ।

দলীয় সূত্র জানায়, এবার প্রথমে দলীয় প্রধান দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। এরপর প্রতিটি বিভাগ এবং কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ জেলার নেতাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে। দলীয় প্রধান সমাপনী বক্তৃতা দিয়ে শেষ করবেন। এরপর আওয়ামী লীগের প্রচার উপকমিটি ও নির্বাচনী সেল থেকে সিডি-বইসহ কিছু প্রচার উপকরণ দেওয়া হবে তৃণমূল নেতাদের।

বিএনপিকে ছাড়াই ভোটের চিন্তা আওয়ামী লীগের 

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি ভোট বর্জনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই তাদের দমন করতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। ২০১৮ সালের ভোটেও দলকে খুব একটা পরীক্ষায় পড়তে হয়নি। এবার বিরোধী দলের আন্দোলন কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে নেতাদের উজ্জীবিত থাকা দরকার। বর্ধিত সভার লক্ষ্যও সেটাই।

দলীয় সূত্র বলছে, এখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের স্বল্প সময়ের ঘোষণায় রাজপথে নামানোর মতো প্রস্তুত করার চেষ্টা চলছে। এর পেছনে বড় বাধা দলীয় কোন্দল। মূল সংকট আগামী নির্বাচনে কে মনোনয়ন পাবেন, এই নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান। গত ২৭ জুলাই রাজধানীতে শান্তি সমাবেশে ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হন। কামরুল ইসলাম তিন মেয়াদের সংসদ সদস্য। শাহীন আহমেদ সেখানে দলের মনোনয়ন চান।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। এই বর্ধিত সভার পর দলের নেতাদের মনোবল আরও চাঙা হবে বলে তিনি মনে করেন।gv

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.