রেকর্ড মুনাফা করেছে মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ৩৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছরের একই সময়ে বিকাশ ২৯ কোটি টাকা লোকসান করেছিল। সেবা চালুর পর এক প্রান্তিকে এত মুনাফা করার ঘটনা এটাই প্রথম। মুনাফার এ ধারা অব্যাহত থাকলে বিকাশ দীর্ঘ মেয়াদে ভালো মুনাফায় ফিরবে বলে আশা খাত-সংশ্লিষ্টদের। ব্র্যাক ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন থেকে বিকাশের মুনাফার এই তথ্য পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে বিকাশের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার বলেন,‘বিকাশ চালু হওয়ার পর মুনাফায় ছিল। মধ্যে সচেতনভাবে বিনিয়োগ করা হয়েছে, যাতে নতুন সেবা যুক্ত হয় ও সেবার মান উন্নত হয়। পাশাপাশি গ্রাহক সচেতনতা ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটাই নিয়মিত চর্চা। ভবিষ্যতে এসব বিনিয়োগ থেকে ভালো ফল আসবে।’
জানা যায়, ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করা বিকাশ কয়েক বছরের মধ্যে মুনাফায় ফেরে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে ২৩ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে ৩৩ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ৪৮ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ১৮ কোটি টাকা মুনাফা করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে ২০১৯ সালে ৬২ কোটি টাকা, ২০২০ সালে ৬৭ কোটি টাকা ও ২০২১ সালে ১২৩ কোটি টাকা লোকসান করে বিকাশ। তিন বছর টানা লোকসানের পর গত বছর বিকাশ আবারও মুনাফায় ফিরে আসে। গত বছর ১৭ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আর গত জানুয়ারি-মার্চ, অর্থাৎ তিন মাসে মুনাফা করেছে ৩৬ কোটি টাকা।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বিকাশ ১৩ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করে। আর বিনিয়োগ থেকে আয় করে ৪২ কোটি টাকা। ফলে কর-পূর্ববর্তী মুনাফা হয় ৫২ কোটি টাকা। ১৬ কোটি টাকা কর দেওয়ার পর মুনাফা দাঁড়ায় ৩৬ কোটি টাকা। ২০২১ সালের একই সময়ে পরিচালন লোকসান ছিল ৬২ কোটি টাকা। তবে বিনিয়োগ থেকে আয় হয় ৩১ কোটি টাকা।
তাতে শেষ পর্যন্ত লোকসান কমে দাঁড়ায় ২৯ কোটি টাকায়। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৭৭ কোটি টাকা পরিচালন লোকসান করে। আর বিনিয়োগ থেকে আয় হয় ১২১ কোটি টাকা। তাতে কর-পূর্ববর্তী মুনাফা দাঁড়ায় ৪৩ কোটি টাকা। যদিও করসহ অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে বছর শেষে মুনাফা দাঁড়ায় ১৭ কোটি টাকা।
এমএফএস খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিকাশ যেভাবে বড় হয়েছে, এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ধারাবাহিক বিনিয়োগ লাগবে। এ ছাড়া এই খাতে নতুন প্রতিযোগী গড়ে উঠেছে। তাই বাজার ধরে রাখতে সেবার মান বৃদ্ধি ও নতুন সেবা চালুতে মনোযোগী হতে হবে বিকাশকে।
জানা যায়, গত মার্চ শেষে বিকাশের গ্রাহক ছিলেন ৬ কোটি ৭৯ লাখ। এর মধ্যে সক্রিয় গ্রাহক ৩ কোটি ৯৬ লাখ। গত জানুয়ারি-মার্চ সময়ে গড়ে প্রতি মাসে বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৬৭ হাজার ১১০ কোটি টাকা। সারা দেশে বিকাশের এজেন্ট রয়েছেন ৩ লাখ ৫২ হাজার ৭০০। দেশের মোবাইলে আর্থিক সেবার বাজারের ৬৫ শতাংশই বিকাশের হাতে।