নাটোরে ‘প্রতারণার শিকার’ অন্তঃসত্ত্বা ১৩২ নারী

0
112
নাটোর জেলা

নাটোর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকার যোগসাজশে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার অন্তঃসত্ত্বা ১৩২ নারীর কাছ থেকে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ডের জন্য মেডিকেল রিপোর্ট আনতে গিয়ে এ প্রতারণার শিকার হন তাঁরা।

এসব নারীর প্রত্যেকের প্রতি মাসে ১ হাজার ৫৫৫ টাকা করে ৩৬ মাস ভাতা পাওয়ার কথা। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালুর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী কয়েকজন নারী।

নারীরা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ডের আবেদন করতে মেডিকেল রিপোর্টের জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা সুইটি রানীর কাছে যান তাঁরা। সুইটি রানী তাঁদের পাঠান শহরের চকরামপুর এলাকার হেলথকেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে।

সেখানে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই কয়েকটি পরীক্ষা করানো হয়েছে। তাঁদের ১৩২ জনের কাছ থেকে গড়ে ৩ হাজার ২০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এ হিসাবে মোট ৪ লাখ ২২ হাজার ৪০০ টাকা খুইয়েছেন তাঁরা।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এতগুলো পরীক্ষা কেন করানো হলো—জানতে চাইলে ডায়াগনস্টিক পরিচালক ইসমাইল হুসাইন বলেন, ‘রোগীরা এসে যে যে পরীক্ষা করতে বলেছেন, আমরা শুধু সেই পরীক্ষাগুলো করেছি। সুইটি রানী একজন সরকারি কর্মকর্তা। সে কারণে তাঁর সঙ্গে আমাদের একটা সুসম্পর্ক রয়েছে।’

তবে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত সুইটি রানী। তিনি বলেন, তিনি কাউকে হেলথকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাননি।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোসা. মাহফুজা খানম বলেন, সুইটি রানীর বিষয়ে এর আগেও অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের সাথী বেগম, পাপিয়া আক্তার, জেসমিন আরা, আঁখি খাতুন, লাইলি বেগম, আলেয়া বেগমসহ ১৩২ জন নারীর সঙ্গে একই ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নারীরা।

ইউনিয়নের গাজিরবিল এলাকার গিয়ে কথা হয় অন্তঃসত্ত্বা জরিনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, হেলথকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ১ হাজার ৬০০ টাকার পরীক্ষা করানো হয়।

পাশের আটঘরিয়া গ্রামের গৃহবধূ শাহিদা বেগম বলেন, বনপাড়ার জাহেদা হাসপাতাল থেকে তিনি আলট্রাসনোগ্রাম করান। সেই রিপোর্ট নিয়ে সুইটি রানীর কাছে গেলে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষার আগের কাগজপত্র চলবে না বলে জানান ওই স্বাস্থ্যকর্মী। পরে হেলথকেয়ারে নানা পরীক্ষা করে নেওয়া হয় ২ হাজার ৫০০ টাকা।

অভিজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার নিয়ম নেই বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক পরিতোষ কুমার রায় বলেন, একজন নারী সন্তানসম্ভবা কি না, তা জানার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে এত পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। শুধু মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে বিষয়টি জানা যায়। আরেকটু নিশ্চিত হওয়ার জন্য বড়জোর আলট্রাসনোগ্রাম করা যেতে পারে।

এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের দেওয়া মেডিকেল রিপোর্টের ভিত্তিতেই মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ডের আবেদন করা যায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন পরিদর্শিকা সুইটি রানী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.