মা হত্যাকাণ্ডের বছর পেরিয়েছে, অগ্রগতি না দেখে হতাশ ছেলে

0
95
২০২২ সালের ১৬ মে সিআইপাড়ার এই বাড়ির দোতলার একটি কক্ষ থেকে সিতারা হালিমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ

পিরোজপুর শহরের সিআইপাড়ার বাসিন্দা প্রয়াত অধ্যক্ষ আবদুল হালিম হাওলাদারের স্ত্রী সিতারা হালিম (৭৫) হত্যাকাণ্ডের এক বছর পার হয়ে গেছে। তবে এ হত্যা মামলায় এখনো আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেনি পুলিশ। এতে মামলার বিচারকাজও শুরু হয়নি। এ অবস্থায় বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী ও নিহত সিতারার ছেলে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও লেখক আমীর খসরু।

গত বছরের ১৬ মে সকালে শহরের সিআইপাড়ার বাড়ির দোতলার একটি কক্ষ থেকে সিতারা হালিমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে পিরোজপুর সদর থানায় সিতারার ছেলে আমীর খসরু হত্যা মামলা করেন। আমীর খসরু ভয়েস অব আমেরিকার বাংলাদেশের সাবেক সংবাদদাতা। এ মামলায় গত বছরের ১৯ অক্টোবর সিআইপাড়ার বাসিন্দা মো. শুক্কুর আলী (৩৮) নামের এক রাজমিস্ত্রিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে শুক্কুর আলী পিরোজপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাদিক আহমেদের কাছে স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গত বছরের ১৫ মে রাতে চুরি করার উদ্দেশে শুক্কুর আলী এক সহযোগীকে নিয়ে ওই বাড়িতে ঢুকেন। এরপর শুক্কুর আলী সিতারা হালিমকে শ্বাস রোধে হত্যা করে ঘরে থাকা টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করেন। শুক্কুর আলী বর্তমানে কারাগারে। তবে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত শুক্কুর আলীর সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

বিচার প্রক্রিয়া নিতে হতাশা প্রকাশ করে সাংবাদিক আমীর খসরু মুঠোফোনে বলেন, ‘বিচার হবে না, শাস্তি হবে না—এটাই এখনকার নিয়মে পরিণত হয়েছে। যাঁরা অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনবেন, তাঁদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে আমি তাঁদের কাছ থেকে কোনো বিচার প্রত্যাশা করি না। আমার মায়ের হত্যা মামলার পর তাঁদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনো কথাই আমাদের জানানো হয়নি। তাঁরা কী সব করছেন, তা শুধু তাঁরাই জানেন।’

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল হালিম হাওলাদারের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী সিতারা হালিম বাড়ির দোতলায় একা থাকতেন। বাড়িতে বিভিন্ন সময় পরিচিতজন ও গৃহকর্মীর যাতায়াত ছিল। হত্যার ঘটনার কিছুদিন আগে সিতারা হালিমের ঘরে রাজমিস্ত্রিরা কাজ করেন। গত বছরের ১৬ মে সকাল আটটার দিকে দেয়ালে রং করার জন্য আবদুল কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তি সিতারা হালিমের বাড়িতে যান। আবদুল কুদ্দুস বাইরে থেকে একাধিকবার ডাকাডাকি করলেও ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ আসছিল না। পরে আবদুল কুদ্দুস ওই বাড়ির নিচতলায় ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তাঁরা পেছনের দরজা দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে একটি কক্ষের মেঝেতে সিতারা হালিমের লাশ দেখতে পান।

লাশ উদ্ধারের পর সিতারা হালিমের মুঠোফোনে একটি মিসড কলের সূত্র ধরে ১৯ অক্টোবর রাজমিস্ত্রি শুক্কুর আলীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। শুক্কুর আলী গ্রেপ্তারের পর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিরোজপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সোলায়মান বলেন, সিতারা হালিম হত্যার ঘটনায় জড়িত আরেক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এরপর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.