ভারতীয় ৭০০ শিক্ষার্থীকে দেশে পাঠাচ্ছে কানাডা, অভিযোগ জালিয়াতির

0
133
প্রতীকী ছবি: এএফপি

পড়াশোনার জন্য এই শিক্ষার্থীরা ২০১৮–১৯ সালে কানাডায় যান। এই শিক্ষার্থীরা কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের (পিআর) জন্য আবেদন করার পর ‘ভর্তির অফার লেটার’ যাচাই-বাছাইয়ে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। সিবিএসএ কাগজপত্র যাচাই–বাছাই করে নিশ্চিত হয় যে এই শিক্ষার্থীদের ‘ভর্তির অফার লেটার’ আসল নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ইতিমধ্যে তাঁদের পড়াশোনা শেষ করে কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন। কেউ কেউ চাকরির অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছেন। স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করেই তাঁরা এই সমস্যার মুখোমুখি হলেন।
১০ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের কানাডায় পাঠানোর কাজ করা জলন্ধরভিত্তিক একজন পরামর্শক বলেছেন, এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে একাধিক কারণ জড়িত। কলেজের ভুয়া অফার লেটার পাওয়া থেকে শুরু করে ভিসা আবেদনের জন্য শিক্ষার্থীদের ফি প্রদানের ভুয়া রসিদও দেওয়া হয়। কারণ, কলেজে ফি জমা দেওয়ার পরই ভিসা দেওয়া হয়।

কাপুরথালার একজন পরামর্শক বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে এমন কলেজের অফার লেটার দেওয়া হয়েছিল, কানাডায় যাওয়ার পর সেখানে শেষ পর্যন্ত তাঁরা পড়তে পারেননি। তাঁদের অন্য কোনো কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল বা পরবর্তী সেমিস্টারের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। অর্থাৎ ভিসার জন্য আবেদন করার সময় নথিতে যে সেমিস্টারে দেখানো হয়েছিল, সেই সেমিস্টারে তাঁরা পড়তে পারেননি।’

এই পরামর্শক আরও বলেন, পড়াশোনার জন্য বিপুলসংখ্যক ভারতীয় শিক্ষার্থী কানাডায় যেতে চান। এই বিষয়কে পুঁজি করে কিছু প্রতারক এজেন্ট কানাডাভিত্তিক একটি বেসরকারি কলেজের সঙ্গে যোগসাজশে এসব করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই ৭০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন শিক্ষার্থী বলেছেন, তিনি কানাডার একটি সরকারি কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন। ভিসার আবেদন করার সময় তাঁকে বেসরকারি কলেজে ভর্তির অফার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কানাডা যাওয়ার পর তাঁকে সরকারি কলেজে ভর্তির কথা বলা হয়। এ জন্য এজেন্ট তাঁর ফি ফেরত দিয়েছিল এবং নতুন কলেজে ভর্তির জন্য সহায়তা করেছিল।

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, পরামর্শদাতা তাঁকে বলেছিলেন, তিনি কানাডায় পৌঁছে কলেজ পরিবর্তন করতে পারেন। এ রকম বেশ কিছু ঘটনা রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা এজেন্টকে কিছু কমিশন দেওয়ার পর কানাডায় পৌঁছে তাঁদের কলেজ পরিবর্তন করে নেন।

বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেছেন, এজেন্ট তাঁদের ফি ফেরত দিয়েছে। এ কারণে তাঁরা অন্য কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে তাঁরা কানাডা সরকারকে কিছু অবহিত করেননি। ফি ফেরত দেওয়ায় এজেন্টকে তেমন একটা সন্দেহ হয়নি।

অন্য একজন পরামর্শক বলেছেন, এসব ক্ষেত্রে যে কলেজ ভর্তির অফার লেটার দিয়েছিল, তাদের ভূমিকা অবশ্যই যাচাই করা উচিত। তারা (কলেজ) আসলেই এই অফার লেটার দিয়েছিল নাকি, এজেন্ট ভুয়া অফার লেটার তৈরি করেছিল তা দেখতে হবে। এ ধরনের কলেজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, শিক্ষার্থীরা এ ধরনের বিষয়গুলো বেশির ভাগই জানেন না।

এই পরামর্শক বলেন, এর আগেও মন্ট্রিয়লের কয়েকটি কলেজ বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি বেশি নেওয়ায় কুইবেক সরকার ওই কলেজগুলোতে কালোতালিকাভুক্ত করেছিল। ওই সব কলেজে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ভারতীয় হাইকমিশন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছিল। তখন শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক পর্যালোচনা দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন কানাডিয়ান হাইকমিশন তাঁদের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ৭০০ শিক্ষার্থীর এখন একমাত্র বিকল্প হলো আদালতে ওই নোটিশকে চ্যালেঞ্জ করা। কিন্তু এই প্রক্রিয়া চার বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
জলন্ধরের পুলিশ কমিশনার কুলদীপ সিং চাহাল বলেন, এই মুহূর্তে এমন কোনো অভিযোগ তাঁর নজরে আসেনি।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেছেন, কোনো আবেদনপত্রে স্বাক্ষর না করায় এজেন্ট কৌশলে কাজটি করেছেন। তিনি (এজেন্ট) শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষরিত সবকিছুই পেয়েছিলেন অর্থাৎ, শিক্ষার্থীদেরই আবেদনকারী করা হয়েছিল। তাই এই জালিয়াতির সঙ্গে তাঁর (এজেন্ট) জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণ করা বেশ কঠিন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নির্দোষ প্রমাণ করাও কঠিন। তবে বাস্তবতা হলো সব শিক্ষার্থীই নির্দোষ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.