ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতাকে হলছাড়া করার চেষ্টা

0
21
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলের সামনে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে, ছবি: সংগৃহীত

সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী চলমান আন্দোলনের অন্যতম নেতা সারজিস আলমকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।

সারজিস অমর একুশে হলে থাকেন। এই হল শাখা ছাত্রলীগে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতা গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে হল থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

পরে একুশে হলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে তা করতে পারেননি অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা। সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে তাঁরা সারজিসের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।

সারজিস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তাঁর বাড়ি পঞ্চগড় জেলায়। তিনি ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে অমর একুশে হল ছাত্র সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে সারজিসকে হলছাড়া করার চেষ্টার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এই খবরে অমর একুশে হলের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে একুশে হলের পাশাপাশি অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে হস্তক্ষেপ করা হয়। তখন একুশে হলের অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা সারজিসের কাছে ক্ষমা চান। বিক্ষোভ চলাকালে দিবাগত রাত একটার দিকে একুশে হলের প্রাধ্যক্ষ ঘটনাস্থলে আসেন। সারজিস হলে থাকবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শান্ত হন। কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা সারজিসের সহযোগীরা তাঁকে তাঁর হলের কক্ষে পৌঁছে দিয়ে আসেন।

ঘটনার বিষয়ে গতকাল মধ্যরাতে সারজিস সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর রুমমেটকে হল শাখা ছাত্রলীগে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতা বলেন, সংগঠনের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা এসেছে, তিনি যেন বৃহস্পতিবারের মধ্যে হল ছেড়ে যান। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তিনি। পরে তিনি সংশ্লিষ্ট শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের কাছে জানতে চান, এমন কিছু বলা হয়েছে কি না। তাঁরা ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন। এই উত্তর পেয়ে তিনি কক্ষে এসে ব্যাগ গুছিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। কারণ, তিনি চাননি কোনো ঝামেলা হোক। হল ফটকে এসে দেখেন, পাঁচ থেকে সাত শ শিক্ষার্থী দাঁড়ানো। তাঁরা তাঁকে যেতে দিচ্ছিলেন না। কারণ, তিনি ছাত্রসমাজের একটা যৌক্তিক দাবির পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছেন। খবর পেয়ে আশপাশের হল থেকে শিক্ষার্থীরা আসেন।

সারজিসের ভাষ্য, একপর্যায়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, হল শাখার কোন শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা তাঁর সঙ্গে এই কাজ করেছেন। তাঁকে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁর সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চান। তাঁরা স্বীকার করেন, ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন কোনো নির্দেশনা ছিল না। তাঁরা তাঁকে হল থেকে বের করে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছিলেন।

ক্ষমা চাওয়ায় একুশে হলের অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের নাম সাংবাদিকদের কাছে বলতে চাননি সারজিস। ছাত্রলীগের শীর্য পর্যায় থেকে কে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, তা-ও তিনি বলেননি।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের একাধিক শিক্ষার্থী মধ্যরাতে এই প্রতিবেদককে ফোন করে অভিযোগ করেন, তাঁরা একুশে হলের দিকে যেতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়। হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী কিছু নেতা এ কাজ করেছেন।

যোগাযোগ করা হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর আবাসিক হলে থাকা না-থাকাটা হল প্রশাসনের বিষয়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সহনশীল ও দায়িত্বশীল আচরণ করার সাংগঠনিক নির্দেশনা রয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

একুশে হলের প্রাধ্যক্ষ ইসতিয়াক মঈন সৈয়দ বলেন, ‘একটা ভুল-বোঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছিলেন। পরে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি সমাধান করেছি। সারজিসকে হলের কক্ষে তুলে দিয়ে এসেছি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.