মেলার কয়েকটি স্টলে থরে থরে সাজানো পাহাড়ে উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য। কোনো কোনো স্টলে রয়েছে হস্তশিল্প কিংবা ঐতিহ্যবাহী কোমর তাঁতে বোনা বাহারি সব পোশাকপরিচ্ছদ। কোনো স্টলে আবার বিক্রি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী নানা পদের পাহাড়ি খাবার।
ঢাকায় বসবাসকারী পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী লোকজনের পাশাপাশি পরিবার-স্বজন নিয়ে মেলায় বেড়াতে গেছেন নগরের বাসিন্দাদের অনেকে। মেলায় মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সেখানে কেউ কেউ স্টল ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন খাবার চেখে দেখছেন। কেউবা কিনছেন তাঁতে বোনা কাপড়, হাতে তৈরি অলংকার কিংবা পাহাড়ে চাষের কৃষিপণ্য।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডের শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে আয়োজিত ‘পার্বত্য মেলা-২০২৪’ এ গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেল। সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের উপস্থিতিতে এ মেলা রূপ নেয় সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এক মিলনমেলায়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য দেশ ও বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতেই পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় চার দিনব্যাপী এ পার্বত্য মেলার আয়োজন করেছে। গত বুধবার শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত।
এবারের পার্বত্য মেলায় ৯৭টি স্টল রয়েছে। এর মধ্যে ৫২টি স্টল বিভিন্ন কৃষিপণ্য ও খাবারের। এসব স্টলের কোনোটিতে রান্না করা খাবার বিক্রি করা হচ্ছে, কোনো কোনো স্টলে আবার তাৎক্ষণিক খাবার তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।
আজ ওই অংশে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি স্বাদের কাঁকড়া, পাহাড়ি মুরগি, মাছ, মাংস, চিংড়ি, মাশরুম ইত্যাদি খাবার চেখে দেখেছেন শহুরে মানুষ। এ ছাড়া কলাপাতায় মোড়ানো বিন্নি ধানের চাল থেকে তৈরি নানা পদের পিঠাও বিক্রি হচ্ছে।
পাশাপাশি বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে লাল, সাদা ও কালো বিন্নি চাল, মসলা, ডাল, সূর্যমুখী কলা, পাহাড়ে চাষ হওয়া তরমুজ, আখ, আনারস, ড্রাগন ফল, তেঁতুল, পাহাড়ি আলু, হলুদ বেগুনসহ জুম পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা নানা ধরনের ফল ও সবজি।
মেলায় তিন বন্ধু মিলে বেড়াতে আসেন বেইলি রোডের বাসিন্দা সুমাইয়া খন্দকার, দীপা আহমেদ ও রিতু ইসলাম। একটি স্টল থেকে কাপড় দেখছিলেন তিনজনে। আয়োজন নিয়ে সুমাইয়া খন্দকার বলেন, ‘মেলায় এসে পাহাড়ের মানুষের জীবনবৈচিত্র্য সম্পর্কে অনেক ধারণা পেলাম। তাঁদের জীবন ও ঐতিহ্য অনেক সমৃদ্ধ।’ তবে মেলার জায়গা অনেক ছোট বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পাহাড়ি বাহারি স্বাদের খাবারদাবার আর ফল-ফসল ছাড়াও মেলায় বিক্রির জন্য আনা হয় তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসকারী বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ঐতিহ্যবাহী সব পোশাক, যেগুলো বেশির ভাগই কোমর তাঁতে বোনা। এর মধ্যে থামি, গামছা, পিনন, ওড়না, বিছানার চাদর এবং কোমর তাঁতে বোনা কাপড় থেকে তৈরি নজরকাড়া বাহারি সব ব্যাগ।
মেলার স্টলমালিকেরা জানান, বাঙালিদের মধ্যেও পাহাড়ি বিভিন্ন জিনিসপত্র ও পোশাক বেশ জনপ্রিয়।
মেলায় ছিল বাঁশের তৈরি বিভিন্ন শোপিস, অন্দরসজ্জার শৌখিন বিভিন্ন পণ্য। এসব ছাড়াও ছিল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন গয়নাও। এর মধ্যে পুঁতি ও পয়সার আদলে তৈরি রুপার মালা, চুড়ি, কানের দুল প্রভৃতি। সেগুলো ১ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় বেচাবিক্রি হতে দেখা যায়।
রাঙামাটির মেয়ে ঋষিতা চাকমা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন মোটিভ দিয়ে মেয়েদের অলংকার তৈরি করেন। নিজের তৈরি গয়না বিক্রির অনলাইন একটি পেজ রয়েছে তাঁর। ঋষিতা চাকমা বলেন, পাহাড়ের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর যেসব ঐতিহ্যবাহী গয়না রয়েছে, তিনি ওই সব গয়না ও অলংকার নিয়েই কাজ করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। পার্বত্য তিন জেলার—রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির ২৭৫ জন শিল্পীর ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনায় প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে।