ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা নিয়ে শতাধিক নোবেল বিজয়ীর খোলাচিঠির ঘটনাকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ বলে অভিহিত করেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট।
আজ বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ১৪ দলের অবস্থানের কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষে সই করেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস। তিনি ১৪ দলের বৈঠকে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। ১৪-দলীয় জোটের প্রধান হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু। ক্ষমতাসীন এই জোটে আওয়ামী লীগ ছাড়াও কয়েকটি বামপন্থী দল যেমন ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল ও জাসদ রয়েছে।
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে শতাধিক বিশ্বনেতা প্রধানমন্ত্রীকে খোলাচিঠি দিয়েছেন ২৮ আগস্ট। এর সামলোচনা করে আজ ক্ষমতাসীন ১৪–দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হলো।
বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় ১৪ দল নেতারা বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন–সার্বভৌম রাষ্ট্র। এ দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন দ্বারা সব ধরনের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যেকোনো বিচারিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার এ ধরনের অপতৎপরতা পবিত্র সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী। ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আইনের আশ্রয় গ্রহণের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। এই অধিকার বাধাগ্রস্ত করে চলমান বিচারিক কার্যক্রম বন্ধের প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
১৪ দলের নেতারা মনে করেন, ‘এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতাপূর্ণ দাবি আদালত অবমাননার শামিল।’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কেন্দ্রীয় ১৪ দল বিশ্বাস করে, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত বা নির্যাতিত কোনো ব্যক্তির ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথ রুদ্ধ করার দাবি উত্থাপন করতে পারে না। আর কোনো বিদেশি ব্যক্তিবর্গের পক্ষ থেকে বিচারাধীন কোনো মামলার বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবি কেবল বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপইÿনয়, একই সঙ্গে একটি স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্বের ওপরও আঘাত।’
কেন্দ্রীয় ১৪ দল নেতারা বলেন, ড. ইউনূসের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা আইনি প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার চলমান রয়েছে। আইনের শাসনের নীতি অনুযায়ী আইনের চোখে সবাই সমান। সে ক্ষেত্রে কারও রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিচয় বিবেচ্য বিষয় নয়। কেউ কোনো অপরাধ করলে তাঁকে আইনের মুখোমুখি হতেই হবে। ফৌজদারি আইন দেশের সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
নোবেল পুরস্কার পেলেই কেউ আইন-আদালতের ঊর্ধ্বে চলে যায় না উল্লেখ করে ১৪ দল বলছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নোবেল পুরস্কার অর্জনকারী অনেকের বিরুদ্ধে নিজ নিজ দেশের আইন অনুযায়ী মামলা হয়েছে এবং বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। দেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ড. ইউনূস আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার ভোগ করছেন। আইনজীবী নিয়োগ করে জামিন নিয়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করছেন। এই মামলার সঙ্গে রাজনীতির কোনো যোগসূত্র নেই।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ‘আইন, বিচারব্যবস্থা ও আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার করে সুবোধসম্পন্ন কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে এমন ধরনের বিবৃতি প্রদান কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং বেআইনি উদ্যোগ স্বেচ্ছাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়। ইতিপূর্বে আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে দেখেছি, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনকারী ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্যও দেশি-বিদেশি অপশক্তি বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিল।’
১৪ দলের নেতারা বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারপ্রক্রিয়া গোষ্ঠীতন্ত্র ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বন্ধ করতে বিবৃতি প্রদান বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী, প্রগতিশীল, সচেতন নাগরিক সমাজকে গভীরভাবে হতাশ করেছে। প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিক বিশ্বাস করে, শুধু ড. ইউনূস নয়; যেকোনো ব্যক্তি কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার লাভের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির পরিবর্তে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করেছেন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান সরকার জনগণের ন্যায়বিচার লাভের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, সংবিধান, আইন ও বিচারব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত বা প্রভাব বিস্তার করে এমন ধরনের বিবৃতি কিংবা তৎপরতা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ১৪ দল।