অন্য দেশের তুলনায় আমরা ভালো অবস্থায় আছি

0
96
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হাতিরঝিলের পানি নিষ্কাশন যন্ত্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস

উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় আছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি।

আজ বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সোনারগাঁও হোটেলের পেছনে হাতিরঝিলের পানি নিষ্কাশন যন্ত্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এমন দাবি করেন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র বলেন, ‘ডেঙ্গু নির্মূল কেউ করতে পারবে না। কোনো দেশ করতে পারেনি। আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। আপনারা উন্নত দেশের সঙ্গে যদি তথ্য ও পরিসংখ্যান মিলিয়ে দেখেন, তাহলে দেখবেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় এখন পর্যন্ত আমরা ভালো অবস্থানে রয়েছি; যদিও আমাদের মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘মৃত্যুর হারের বিষয়টা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে আরও নজর দিতে হবে। চিকিৎসাসেবার মান–পরিধি আরও বৃদ্ধি করতে হবে। একজন রোগী যেন শঙ্কা অবস্থায় না যায়, এ জন্য প্রাক্‌ যে কার্যক্রমগুলো, চিকিৎসাসেবাগুলো, এটা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে মৃত্যুর হার কমাতে পারব।’

তবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং অন্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো বলে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দাবি করলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে ভিন্ন কথা। মশার অবস্থা জানতে গত ১৭ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত এবারের প্রাক্‌-বর্ষা জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেছেন, এবারের জরিপে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। এবার মশার ঘনত্ব ২০১৯-২০ সালের থেকে অনেক বেশি।

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ২০১৯ সালে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্‌-বর্ষা জরিপের তথ্য বলছে, এবারের পরিস্থিতি ২০১৯ সালের চেয়েও কয়েক গুণ খারাপ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার ঘনত্ব এবং সম্ভাব্য প্রজননস্থলের সংখ্যা সর্বোচ্চ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিই ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০১৯ সালে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ড ছিল ২১টি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, প্রাক্-বর্ষা জরিপ অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সব এলাকাতেই ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি বেশি। এবার ডেঙ্গুর মৌসুম গত বছরের মতো দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সিটি করপোরেশনের জোরালো কার্যক্রমের পাশাপাশি নগরবাসী সচেতন না হলে পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ নিতে পারে।

চলতি বছর গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত ৯ হাজার ৮৭১ জন। এর মধ্যে গত সোমবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত চলতি বছরে এক দিনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। এই সময়ে মারা গেছেন পাঁচজন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৭৮ জন। দেশে কোনো বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ রূপ আর কখনো দেখা যায়নি। ২০১৯ সালে প্রথম ছয় মাসে মারা গিয়েছিলেন ৮ জন। আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ২০৮ জন।

রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় দক্ষিণ সিটির আওতাধীন এলাকার রোগী বেশি থাকে, রোগীদের অভিযোগ আপনাদের দিকে বেশি—মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে এমন প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বলেন, ‘ঢাকার উত্তর অঞ্চলটা পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। সেখানে বনানী–গুলশানের সঙ্গে তুলনা করলে সেটা হবে না। বারিধারার সঙ্গে যদি মেলান, হবে না। উত্তরা রয়েছে, মিরপুর রয়েছে—এগুলো পরিকল্পিত নগরায়ণ হয়েছে। আমাদের এখানে পরিকল্পিত নগরায়ণ কম হয়েছে। এখানে জনসংখ্যা বেশি, ভার বেশি। আমাদের এখানে ছোটখাটো পরিবেশ স্থাপনা বেশি। প্রতিকূলতা বেশি। সেই প্রতিকূলতা নিয়েই আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হচ্ছি।’

এ প্রসঙ্গে মেয়র শেখ তাপস আরও বলেন, ‘এসব প্রতিকূলতাকে আমরা অগ্রাহ্য করিনি। এসব প্রতিকূলতা নিয়েই কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছি। এ জন্য আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে সকালে সাতজন, বিকেলে ছয়জন নিয়োজিত করেছি। এর জন্য যে পরিমাণ কীটনাশক প্রয়োজন, সে পরিমাণ কীটনাশক তাদের দেওয়া হয়েছে। যে পরিমাণ যান–যন্ত্রপাতি দরকার, সে পরিমাণ যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। সে পরিমাণ নিবিড় তদারকি আমরা করছি।’

নগরবাসীর উদ্দেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র বলেন, ‘সবাইকে অনুরোধ করছি, আপনারা যেখানে মনে করবেন লার্ভা পাওয়া যেতে পারে বা আশঙ্কা করবেন পানি জমে আছে, তাতে লার্ভা হতে পারে, এ বিষয়ে জানানো মাত্রই ১৫ মিনিটের মধ্যে আমাদের মশককর্মী, মশক সুপারভাইজরসহ গিয়ে সেই লার্ভা ধ্বংস করে বিনষ্ট করে সেই জায়গা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করে দেবে। আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। পানি কোথাও জমতে দেবেন না। পানির উৎস ধ্বংস করতে পারলে ডেঙ্গু রোগ থেকে মুক্ত হতে পারব।’

এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সারবীন, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, নির্বাহী প্রকৌশলী সফিউল্লাহ সিদ্দিক ভূঁইয়া, মিঠুন চন্দ্র শীল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.