ড্যাপের সংশোধন ঢাকার বাসযোগ্যতা আরও নষ্ট করবে: আদিল মুহাম্মদ খান

0
171
অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) সংশোধনের উদ্যোগ অনতিবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খানের দাবি, ড্যাপ সংশোধনের ক্ষেত্রে সব অংশীজনের পরামর্শ না নিয়ে কেবল আবাসন ব্যবসায়ী এবং ইমারত নকশাকারী ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের আগ্রহকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, যা ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতাকে আরও নষ্ট করায় ভূমিকা রাখবে।

আজ শনিবার সকালে ‘ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধনের উদ্যোগ: আইপিডির পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। আইপিডি এ সভার আয়োজন করে।

ড্যাপ সংশোধনের প্রস্তাবনায় কী আছে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘প্রথমত, অন্তত তিন বছরের জন্য সরকারি ও বেসরকারি আবাসন প্রকল্পে ভবনের উচ্চতার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি আসছে। দ্বিতীয়ত, আগামী তিন বছরের জন্য সরকারি আবাসন, বেসরকারি আবাসন প্রকল্পে ভবন নির্মাণে আগ্রহীদের নাগরিক সুবিধা নির্ধারিত স্থান সংরক্ষণের কারণে প্রণোদনা হিসেবে অতিরিক্ত দশমিক ৫ এফএআর (ফ্লোর এরিয়া রেশিও) দেওয়া হবে। অথচ সরকারি ও বেসরকারি পরিকল্পিত আবাসিক প্রকল্পের জন্য এরই মধ্যে ড্যাপে দেওয়া আছে। বৈশ্বিক মানের চেয়ে বেশি এফএআর দেওয়া আছে ড্যাপে। আমরা বলছিলাম, এফএআর আরও কমানোর জন্য। এখন বলা হচ্ছে সেখানেও বাড়ানো হবে।’

ড্যাপের সংশোধনের প্রভাব কী হতে পারে, তার ব্যাখ্যায় আইপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এসব হলে ছোট রাস্তার পাশে বড় ভবন হয়ে যাবে। ভবনে আলো-বাতাস ঢুকবে না। সেখানে যারা থাকবে, তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ব্যাহত হবে। আলো-বাতাস না পেয়ে মানুষ বাধ্য হয়ে এসি কেনেন।

ওই জায়গা আরও গরম হয়ে যায়। বিপরীত পাশে থাকা অন্যজনও তখন এসি কিনতে বাধ্য হন। এসি চালানো ও দিনের বেলায় বাতি জ্বালানোয় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে। সেই সঙ্গে বেশি মানুষ বাস করে।

যার চাপ তৈরি হয় রাস্তায়। পানি যাওয়ার জায়গা কমে যায়। খেলার মাঠ থাকে না। এগুলো একটা আরেকটার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এগুলোকে অগ্রাহ্য করে ড্যাপ সংশোধন করা হচ্ছে।

বেশি এফএআর দেওয়ার কারণে উত্তরাসহ ঢাকার অনেক এলাকা দিন দিন বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, উত্তরার অলিগলিতেও এখন যানজট লাগে। এখন পূর্বাচলও এ ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেছেন, বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে ড্যাপ সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, এ কথা জানিয়ে আইপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, কিন্তু বাস্তবতা হলো অল্প কয়েক অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। যাঁদের স্বার্থ আছে, তাঁদের সঙ্গেই আলোচনা করা হয়েছে। এখানে আবাসন ব্যবসায়ী এবং ইমারত নকশাকারী ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের আগ্রহকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান আরও বলেন, যাঁরা আবাসন ব্যবসা করেন, তাঁরা ব্যবসা করতে চাইবেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে জনস্বার্থ ও জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যবসার লাগাম টেনে ধরা। তিনি বলেন, রাজউকের (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) সক্ষমতা বাড়াতে হবে। রাজউকের যে নজরদারির দুর্বলতার অভিযোগ আছে, সেটা কাটিয়ে উঠতে হবে। দুর্নীতি ও পেশিশক্তির কাছে রাজউকের আপস করার যে নজির আছে, সেটা কমাতে হবে। রাজউক যত দিন আপস করবে, তত দিন যতই ড্যাপ করা হোক, কাজে আসবে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.