ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের আহ্বান আন্তর্জাতিক ছয় সংগঠনের

0
159

বাংলাদেশে সাংবাদিকসহ সরকারি নীতি ও কাজের সমালোচনাকারীদের ওপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণের বিষয়টি উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক-সমালোচকদের দমন-পীড়ন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আজ বুধবার (৩ মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বের ছয়টি স্বাধীন সংগঠন।

সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে—অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন।

বিবৃতিটি এইচআরডব্লিউর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়ার কথা। এ নির্বাচনের আগে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে সীমিত করার বিষয়টি মুক্ত রাজনৈতিক বিতর্কের পরিবেশকে দুর্বল করছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশে ৫৬ জন সাংবাদিক সরকার ও তার সমর্থকদের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন বলে জানা যায়। বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীন গ্রেপ্তারের ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাঁরা হয়রানি, নজরদারি ও সরকার-সমর্থকদের দ্বারা শারীরিক হামলার শিকার হচ্ছেন।

উদাহরণ হিসেবে বিবৃতিতে বলা হয়, জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গত ৩০ মার্চ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে মধ্যরাতে আটক করা হয়েছিল। একই প্রতিবেদনের কারণে সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। পরে শামসুজ্জামান জামিনে মুক্তি পান।

বিবৃতিতে সংগঠনগুলো বলেছে, বাংলাদেশে সরকারিনীতি, দুর্নীতির অভিযোগ, অবৈধ ব্যবসাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজের জেরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ক্রমাগত ব্যবহারে তারা উদ্বিগ্ন। ঢাকাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের তথ্যানুসারে, ২০১৮ সালে কার্যকর হওয়ার পর থেকে ২০২৩ সালের মে মাসের প্রথম দিন পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৩৩৯টি মামলা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বার্তাকক্ষগুলো আরও সেলফ-সেন্সরশিপের দিকে যাচ্ছে। সরকারি কর্তৃপক্ষ সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট থেকে প্রতিবেদন সরাতে বলছে।

বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অন্যান্য আইনও অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস আইন ও দণ্ডবিধির আওতায় মামলার তদন্ত চলার কথা বলা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, করোনা মহামারির সময় স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন তিনি। এ প্রতিবেদনের জন্য তিনি প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের ওপর ক্রমবর্ধমান দমন-পীড়ন সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের ওপর একটি শীতল প্রভাব ফেলছে। সাংবাদিকতার স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে রুদ্ধ করছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের ২০২২ সালের বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬২তম।

বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৫টি দাবি জানানো হয়েছে। এগুলো হলো—
বাতিল না হওয়া পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে। অথবা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনটি সংশোধন করতে হবে।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতার দ্রুত, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও কার্যকর তদন্ত করতে হবে। যেকোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ন্যায়বিচারের মাধ্যমে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

শুধু মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের কারণে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে এমন সব অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হবে।

সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। জনগণ যাতে নিগ্রহের ভয়ভীতি ছাড়াই অফলাইন ও অনলাইন—উভয় ক্ষেত্রে সমালোচনা, উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার খর্ব করে, এমন আইনের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। গণমাধ্যমের অবাধ ও স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকার রক্ষা করতে হবে। সংবাদমাধ্যম থেকে পূর্ণ ও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.