মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচা বাজার ঘিরে ‘দুষ্টচক্র’

0
88
রাজধানীর মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচাবাজারে (কৃষি মার্কেট) অগ্নিকাণ্ডের ছবি। সংগৃহীত

রাজধানীর মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচাবাজারে (কৃষি মার্কেট) অগ্নিকাণ্ডের পর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সলিমউল্লাহ সলুর দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে নিজের দোকান না থাকলেও কয়েকজনকে নিয়ে কাগুজে কমিটি করেন তিনি। সেখানে নিজেকে মার্কেটের সভাপতি ঘোষণা দেন।

এরপর মাসে লাখ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল ও গার্ড বিল তুলে গায়েব করা হচ্ছে। বিপদে ব্যবসায়ীদের পাশেও থাকেন না সলু। ভয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খোলেন না সাধারণ দোকান মালিকরা।

কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, গত ২৭ বছরে মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচাবাজারে দোকান মালিক সমিতির কোনো নির্বাচন হয়নি। ১৯৯৭ সালে মার্কেট চালু হওয়ার পর একটি কমিটি হয়। পরে ওই কমিটির সভাপতির মৃত্যুর পর শুভেচ্ছা জুয়েলার্সের মালিক আলা বক্স সভাপতি এবং মা ও মুন জুয়েলার্সের মালিক মিয়া চান সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। পরে সাধারণ ব্যবসায়ীরা নির্বাচনের দাবি তোলেন। সর্বশেষ ২০২০ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচনে ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন সলু। নির্বাচিত হলে সর্বপ্রথম মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ইশতেহারে। পরে নিজেই সমিতির সভাপতি হয়ে বসেন।

এ সময় তাঁর কমিটিতে কোষাধ্যক্ষ পদে জায়গা করে নেন স্থানীয় জামায়াত নেতা ওয়াহিদুল হক। মার্কেটে ৩১৭টি তালিকাভুক্ত ও অস্থায়ী ৭০০ দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে মাসে ৬০০ টাকা করে গার্ড ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী বিল তোলে সমিতি।

গতকাল সোমবার ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দোকান জোড়াতালি দিয়ে কেনাবেচা শুরু করেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। পুড়ে যাওয়া দোকানের ভেতর থেকে উদ্ধার করা মালপত্র বিক্রি করছেন কম দামে। আবার কেউ কেউ ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই কিছু মালপত্র নিয়ে বসে পড়েছেন। এ মাসের মধ্যেই পুরো মার্কেট চালু হওয়ার আশা করছেন তারা।

দোকান মালিক সমিতির সাবেক এক নেতা বলেন, সমিতির আগের কমিটি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখত। কিন্তু বর্তমান কমিটি শুধু টাকা তোলে; মার্কেটের উন্নয়নে কাজ করে না।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রেতাদের সুবিধার জন্য দোকানের বাইরে মার্কেটের গলিতে ফ্যান লাগান ব্যবসায়ীরা। সেই ফ্যানের বিদ্যুৎ বিলও দেন তারা। এর মধ্যেও প্রতারণা হয়। শতাধিক ফ্যানের বিলের কথা বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৭০০-৮০০ টাকা করে বিল নেওয়া হয়। এ ছাড়া গত মাসে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা করে বিদ্যুৎ বিল নেওয়া হয়েছে। গড়ে ১ হাজার টাকা ধরে ৪৪৪টি দোকান থেকে ৪৪ লাখ ৪ হাজার টাকা ওঠায় মালিক সমিতি। দোকানের বিদ্যুৎ বিলের কাগজে অতিরিক্ত ইউনিট দেখিয়েও হাতিয়ে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা।

বর্তমান কমিটির এক সদস্য বলেন, পুরো মার্কেটে গার্ড তিন-চারজন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী দুই-তিনজন। তাদের জন্য মাসে ৬০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। টাকার হিসাবে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬ লাখ ৬ হাজার ৪০০ টাকা। এসব টাকার কোনো হদিস নেই।

এই সদস্য বলেন, আগের কমিটি মার্কেট থেকে গার্ড ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী বিল তুলত ৩০০ টাকা করে। আর বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে ছিল না সিস্টেম লসের নামে বাড়তি বিল। মার্কেটের ফ্যানের বিলও ছিল না।

জানা গেছে, ক-ব্লক পূর্ব পাশের মাছ-মাংস পট্টিতে ৭৪টি দোকান। খ-ব্লক মাঝখানের শেডে ১৩১টি দোকান ও গ-ব্লক মার্কেটে দক্ষিণ পাশের শেডে ১১২টি দোকান। এই ৩১৭টি দোকানের মালিক ভাড়াটিয়ারা। আর ১২৭টি দোকানের মালিক ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ, যার মধ্যে সব দোকানই গত বৃহস্পতিবারের আগুন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এর মধ্যে মাছ-মাংস পট্টির ৭৪টি দোকান অক্ষত আছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে মার্কেট সমিতির কোষাধ্যক্ষ ওয়াহিদুল হক বলেন, ‘সিস্টেম লস বিলের নামে কোনো টাকা তোলা হয় না। এ ছাড়া গার্ড বিল আমরা তুলি না। কে তোলে জানা নেই।’

অভিযোগের বিষয়ে মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতি সলিমউল্লাহ সলু বলেন, ‘মার্কেটে আমার একটি দোকান আছে। কিন্তু তার নম্বর আমি জানি না।’ পরে বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের মার্কেট, আমি ছাড়া কে সভাপতি হবে?’ চাঁদা তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কয়েকটি মিটিং ছাড়া আমি ওখানে বাজারও করতে যাই না। চাঁদা তোলার বিষয়ে কোনো কিছুই জানা নেই।’

আব্দুল হামিদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.