ট্রাম্পের শুল্ক নীতি চীনের জন্য জন্য সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে আফ্রিকায়

0
18
আফ্রিকা

আফ্রিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। এই মহাদেশের বেশ কয়েকটি দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে উচ্চ হারের শুল্কের মুখোমুখি হচ্ছে।

কিন্তু এই সংকাটই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের জন্য একটি সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আফ্রিকাকে বাণিজ্যিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া চীন এখন তাদের জন্য একটি রক্ষাকবচ হিসেবে এগিয়ে এসেছে।

নাইজেরিয়ান অর্থনীতিবিদ বিসমার্ক রেওয়ানে বলেন, ‘আমরা (আফ্রিকা) সরাসরি চীনের হাতেই চলে যাচ্ছি। এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি।’ গত কয়েক বছরে আফ্রিকার বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হওয়া চীনের দিকে মহাদেশটির আরও ঝুঁকির এই প্রবণতার কথা উল্লেখ করে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আফ্রিকার চারটি দেশ—লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়া—ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে কঠোর শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে, যেখানে রফতানিতে ২৫% থেকে ৩০% পর্যন্ত শুল্ক দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

হোয়াইট হাউস স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) প্রকাশিত সংশোধিত শুল্ক তালিকায় দেখা গেছে, আফ্রিকার আরও ১৮টি দেশের ওপর ১৫% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। গত এপ্রিলে, প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক ঘোষণা করা হলে ট্রাম্প এটিকে ‘প্রতিশোধমূলক’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, সেগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করেন।

তবে ট্রাম্পের শুল্ক নির্ধারণের ভিত্তি ছিল সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি—সেসব দেশের নিজস্ব শুল্ক নীতি নয়।

আফ্রিকার অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির ওপর ৩০% শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ‘বাণিজ্য তথ্যের সঠিক প্রতিফলনের ওপর ভিত্তি করে নেয়া হয়নি।’

চীনের জন্য সুযোগ

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব থেকে আফ্রিকাকে রক্ষা করতে চীন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। গত জুনে চীন জানায়, তারা প্রায় সব আফ্রিকান অংশীদার দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করবে।

দক্ষিণ আফ্রিকার গবেষক নেও লেটসওয়ালো বলেন, ‘বিকাশমান দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর নেই।’

তিনি আফ্রিকান দেশগুলোকে ‘সম্পূর্ণরূপে চীনের দিকে ঝুঁকে এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প হিসেবে গড়ে তোলার’ পরামর্শ দেন।

লেটসওয়ালো আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে তার বৈশ্বিক নেতৃত্বের অবস্থান হারাচ্ছে। দেশগুলো যত বেশি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমাবে, চীন তত বেশি বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সুযোগ পাবে।’

শুল্ক কার্যকরের শেষ সময়ের আগেও আফ্রিকার পক্ষ থেকে চেষ্টা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র কোনো আফ্রিকান দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে পারেনি, যা হোয়াইট হাউসের অগ্রাধিকার তালিকায় আফ্রিকার অবস্থানকেই স্পষ্ট করে।

লেটসওয়ালো যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যর্থতাকে ‘চীনের জন্য একটি উন্মুক্ত গোল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

সূত্র: সিএনএন নিউজ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.