সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গতকাল মঙ্গলবার নতুন করে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে ট্রাম্প তৃতীয় একটি মামলায় অভিযুক্ত হলেন। তবে শুধু ট্রাম্প একাই নন, তাঁর আশপাশের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও নানা ফৌজদারি মামলা রয়েছে।
তাঁদের কয়েকজন অভিযুক্তও হয়েছেন। কেউ মামলার রায়ে কারাভোগ করেছেন, কেউ ক্ষমা পেয়ে গেছেন। আবার কারও কারও বিরুদ্ধে বিচারকাজ এখনো শুরুই হয়নি।
ট্রাম্পের সহযোগী ও মিত্ররা কে কত মামলার মুখোমুখি হয়েছেন, তা জেনে নেওয়া যাক—
স্টিভ ব্যানন
কংগ্রেস অবমাননার দায়ে ২০২২ সালে ট্রাম্পের সাবেক নির্বাচনী প্রচার দলের সদস্য স্টিভ ব্যাননকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার ঘটনায় প্রতিনিধি পরিষদের তদন্ত কমিটির সামনে ব্যাননকে হাজির হতে বলা হয়। তবে তিনি তা করতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে কংগ্রেস অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে ব্যাননের বিরুদ্ধে এখনো সাজা ঘোষণা করা হয়নি।
নিউইয়র্কের স্থানীয় আদালতেও ব্যাননের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা হয়েছে। কৌঁসুলিদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের অনুদান নিয়ে দুর্নীতির মধ্য দিয়ে ব্যানন ট্রাম্প সমর্থকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
ব্যানন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। এ মামলায় ২০২৪ সালের মে মাসে তাঁর বিরুদ্ধে বিচার শুরু হওয়ার কথা। এই মামলায় ফেডারেল আদালতেও ব্যানন অভিযুক্ত হন। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আগে ওই মামলায় ট্রাম্প ব্যাননকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
রজার স্টোন
ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও পরামর্শক রজার স্টোন। ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে তদন্ত চলার সময় তদন্তকারী আইনপ্রণেতাদের সামনে সত্য বলার শপথ করার পরও মিথ্যা বলায় ২০১৯ সালে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। তাঁকে তিন বছর চার মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাজা ভোগ করতে রিপাবলিকান নেতা স্টোন কারাগারে হাজির হওয়ার আগের দিন ট্রাম্প তাঁর সাজা কমিয়ে দেন। পরে স্টোনের সাজা মওকুফ করা হয়।
অ্যালেন উইসেলবার্গ
ট্রাম্পের রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সাবেক প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা তিন মাসের বেশি কারাভোগ করেছেন। কর জালিয়াতিতে প্রকৌশলীকে সহযোগিতা করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এ সাজা হয়। উইসেলবার্গ ২০২২ সালে দোষী সাব্যস্ত হন। কর জালিয়াতির অভিযোগে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার বিচারকাজ চলার সময় তিনি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। ওই মামলায় শুধু কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল, ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা হয়নি।
পিটার নাভারো
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে থাকাকালে তাঁর উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন পিটার নাভারো। ২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় প্রতিনিধি পরিষদের তদন্ত দলের কাছে সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেস অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। নাভারো নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিচারকাজ এখনো শুরু হয়নি।
প্রতিনিধি পরিষদ থেকে একই অভিযোগে ট্রাম্পের আরও দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী মার্ক মিডৌস এবং ড্যানিয়েল স্কাভিনোর বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছিল। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়নি।
মাইকেল কোহেন
২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে পর্নো তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলস এবং সাবেক প্লেবয় মডেল কারেন ম্যাকডুগালকে অবৈধভাবে অর্থ দেওয়ার অভিযোগে ২০১৮ সালে ট্রাম্পের সাবেক ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন দোষী সাব্যস্ত হন। তাঁকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
নির্বাচনের আগে স্টরমি ড্যানিয়েলস এবং কারেন ম্যাকডুগাল অভিযোগ করেছিলেন, বেশ কয়েক বছর আগে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁদের যৌন সম্পর্ক ছিল। নির্বাচনের আগে তাঁদের মুখ বন্ধ করতে ওই অর্থ দিয়েছিলেন কোহেন।
২০১৮ সালেই কংগ্রেসে মিথ্যা বলার অভিযোগেও দোষী সাব্যস্ত হন কোহেন। মস্কোতে ট্রাম্প টাওয়ার নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করার ব্যাপারে তিনি কংগ্রেসকে মিথ্যা বলেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। পরবর্তী সময়ে কোহেন ট্রাম্পের ঘোর সমালোচক হয়ে ওঠেন।
মাইকেল ফ্লিন
একসময় মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন মাইকেল ফ্লিন। অবসরপ্রাপ্ত এ মার্কিন সেনা কর্মকর্তা ২০১৭ সালে এক মাসের কম সময়ের জন্য ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।
ওই বছর ফ্লিন স্বীকার করেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ে মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে (এফবিআই) তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন। অবশ্য ফ্লিন পরবর্তী সময়ে সে স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের চেষ্টা করেছিলেন। ২০২০ সালে ট্রাম্প তাঁকে ক্ষমা করে দেন।