মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করলেও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। যদিও নতুন করে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের সঙ্গে বিদ্যমান ১৬.৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক যোগ হবে। এতে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকে কার্যকর শুল্ক হার দাঁড়াবে ৩৬.৫ শতাংশ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত নতুন এই শুল্ক বিশ্বব্যাপী সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোকে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কের বোঝা সামলাতে হচ্ছে, সেখানে ৩৬.৫ শতাংশকে সুবিধাজনক বলেই মনে করছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।
তাদের ভাষ্যমতে. যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের শীর্ষ পাঁচ রপ্তানি পণ্য—ট্রাউজার, নিটেড পোলো শার্ট, ওভেন শার্ট ও ব্লাউজ, সোয়েটার এবং অন্তর্বাস—একত্রে মোট পোশাক রপ্তানির ৮০ শতাংশ। এই সবগুলোতে তুলার ব্যবহার অনেক বেশি। সিনথেটিক পোশাকের চেয়ে সুতির পোশাকের ওপর অনেক কম শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এ দিক থেকেই ভিয়েতনাম ও চীনের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, কোনো রপ্তানি পণ্যে যদি ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, তবে পণ্যের মূল্যের ওই অংশের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক মওকুফ করা হবে। এর মানে হলো, বাংলাদেশে তৈরি ১০ ডলারের একটি শার্টে যদি ২০ শতাংশ মার্কিন তুলা ব্যবহার করা হয়, তবে পাল্টা শুল্ক শুধু ৮ ডলারের ওপর প্রযোজ্য হবে, পুরো ১০ ডলারের ওপর নয়। কারণ কিছু বাংলাদেশি রপ্তানিকারক তাদের পণ্যে ইতোমধ্যে আমেরিকায় উৎপাদিত তুলা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবহার করছেন, যার ফলে তাদের পণ্যে আরও কম শুল্ক প্রযোজ্য হবে।
ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষক বলছেন, বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক প্রতিযোগী ভিয়েতনাম, ভারত ও চীনের চেয়ে কম। নতুন শুল্ক বিভিন্ন দেশকে ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে এবং বাংলাদেশের জন্য এটি সুবিধাজনক হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৮৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৯.৩ শতাংশ, যা এখন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, মার্কিন পোশাক ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতারা তুলনামূলক কম শুল্কের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেবে।
এদিকে, বৈশ্বিক পোশাক বাজারে বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিযোগী ভিয়েতনাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১৮.৯ শতাংশ হিস্যা নিয়ে আছে এবং তাদের ওপরও ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে তাদের পণ্যের মোট শুল্ক এর চেয়ে অনেক বেশি হবে। ভিয়েতনামের রপ্তানি তালিকায় বেশিরভাগই উচ্চমূল্যের সিনথেটিক পোশাক (যেমন—অ্যাকটিভওয়্যার, স্কিওয়্যার), যেগুলোর ওপর আগে থেকেই গড়ে ৩২ শতাংশ শুল্ক ছিল। এর সঙ্গে নতুন শুল্ক যোগ হওয়ায় তাদের কার্যকর শুল্ক হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ ছাড়া, চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক এড়াতে ভিয়েতনামের মাধ্যমে কোনো পোশাক রপ্তানি হলে তার ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। ভিয়েতনামের পোশাক খাত যেহেতু চীনের কাঁচামাল, বিনিয়োগ ও সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, তাই এটি তাদের জন্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে বলা যায়।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের আরেক প্রধান প্রতিযোগী দেশ ভারতের হিস্যা আছে ৫.৯ শতাংশ। তবে ওয়াশিংটন থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে এই দেশটি। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। তৈরি পোশাকে যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্ক মিলিয়ে ভারতের কার্যকর শুল্ক হার এখন ৬৬.৫ শতাংশ দাাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী দেশ চীনের যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হিস্যা ২০.৮ শতাংশ। দেশটির কার্যকর শুল্ক হার এখন ৫৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্ক আলোচনা অমীমাংসিত থাকায় এই হার আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিকারী অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ বলেন, শুল্কের এই হার আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক।
ট্রাম্পের নতুন শুল্কহার বাংলাদেশের জন্য আর্শীবাদ বয়ে আনবে জানিয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, আশা করা যায় বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি বাড়বে, কারণ শুল্কের দিক থেকে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমারা সুবিধাজন অবস্থানে আছি। পোশাক ছাড়াও জুতা এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিও এই শুল্ক সুবিধার কারণে বাড়বে বলে জানান তিনি।