সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে ‘নালিশের’ ব্যাপারে এবার মুখ খুললেন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও এনজিওকর্মী প্রিয়া সাহা।
বাংলাদেশ থেকে অনেক সংখ্যালঘু নিখোঁজ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে তিনি আলোচনা- সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে এক সাক্ষাতের সময় তিনি ওই মন্তব্য করেছিলেন।
সেই মন্তব্য প্রসঙ্গে শনিবার (২৪ জুলাই) নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে ‘সনাতন ধর্মাবলম্বীদের’ এক সভায় প্রিয়া সাহা মুখ খুলেছেন। ট্রাম্পের কাছে কেন ওই মন্তব্য করেছিলেন তার ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমার পূর্বপুরুষ মধ্যস্বত্ত্বভোগী বা তালুকদার বা ছোট জমিদার ছিল। তাদের অনেক জমি ছিল। এখনো ৩০০ একর সম্পত্তি রয়েছে আমার বাপ-দাদাদের। আমাদের জমি দখল করে খাচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে। বিষয়টি রাজনৈতিক নেতারা জানেন।’
তিনি বলেন, ‘একটি গ্রামকে কীভাবে সিস্টেম্যাটিকভাবে উচ্ছেদ করে তার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো আমাদের গ্রাম।’ তাদের ফসল জোরপূর্বক কেটে নেওয়া হতো, চিংড়ির ঘের দখল করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে এবং গ্রামে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালে যখন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীরা ক্ষমতায়, সে সময় আমার বাবার জমির ওপর বিশাল ইটের ভাটা করল। কত মামলা-মোকদ্দমা করা হলো। কেউ শোনে না।’
প্রতিটি হত্যাকাণ্ডে মামলা হয়েছে উল্লেখ করে প্রিয়া বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলের মানুষেরা মামলা করতে খুব জানে। কিন্তু ওই যে, যেই জজ, সেই পুলিশ, সেই উকিল, সরকারি উকিল- ফাইনালি কিছু হয় না।’
২০১৯ সালে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা বলেছিলেন, ‘‘স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানকার ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেছে। দয়া করে বাংলাদেশি জনগণকে সাহায্য করুন। আমরা দেশ ছাড়তে চাই না, থাকতে চাই।’’ তবে প্রিয়া সাহার ওই অভিযোগের কোনো সত্যতা এখনো প্রমাণিত হয়নি।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে সেই ‘নালিশের’ পর প্রিয়া সাহা আর দেশে ফেরেননি। ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি এনজিওর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে কংগ্রেস ছাড়াও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে দেনদরবার করেন বলে এই সমাবেশে উল্লেখ করেন প্রিয়া সাহা। তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতির ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানান।
সংগঠনের প্রধান রামদাস ঘরামির সার্বিক তত্ত্বাবধানে সভায় সভাপতিত্ব করেন ডা. প্রভাত চন্দ্রদাস। আলোচনায় অংশ নেন শিতাংশু গুহ, অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার, ড. দ্বীজেন ভট্টাচার্য, ড. দীলিপ নাথ, সোকরানী ধনপাত, সবিতা দাস প্রমুখ।