থিয়েটার–জগতে পা রাখামাত্রই নিজের প্রতিভা দিয়ে সবার নজর কাড়ছিলেন রোসা টেইলর। সংগীত-নাট্যে উচ্চশিক্ষা নিয়ে পেশাগত অভিনয়ের পথেই হাঁটছিলেন তিনি। আগামী দিনের মঞ্চে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু সবকিছু থেমে গেল একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায়।
মাত্র ১৯ বছর বয়সে থেমে গেল ব্রিটিশ তরুণী রোসার জীবনযাত্রা। করশাম শহরের একটি লাইব্রেরিতে শিশুদের জন্য মঞ্চনাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করতে যাওয়ার পথে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এই উঠতি অভিনেত্রী। তাঁর এমন আকস্মিক মৃত্যু শোকের ছায়া ফেলেছে ব্রিটেনের থিয়েটার অঙ্গনে। খবর বিবিসির
বিবিসির খবর অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারের করশাম শহরে এ৪ ও বি৩১০৯ সড়কের সংযোগস্থলে একটি যাত্রী বহনকারী গাড়ির সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মারা যান রোসা। তিনি সেদিন করশাম লাইব্রেরিতে শিশুদের জন্য একটি মঞ্চনাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছিলেন।

উইল্টশায়ার পুলিশ জানিয়েছে, ট্রাকচালক দুর্ঘটনায় আহত হননি। তবে ঘটনার বিষয়ে যাঁরা কিছু জানেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ।
রোসার মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তাঁর পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীরা। এক আবেগময় শ্রদ্ধাঞ্জলিতে তাঁর বাবা গ্যারেথ টেইলর বলেন, ‘রোসাকে যাঁরা চিনতেন, সবাই বলবেন—সে ছিল ভেতরে-বাইরে অপার সৌন্দর্যের একজন মানুষ। সে ছিল এমন এক তারা, যা উজ্জ্বলভাবে জ্বলে ওঠে, আবার দ্রুত নিভেও যায়। যার সঙ্গে একবার দেখা হয়েছে, সে–ই তাকে ভালোবেসেছে।’
রোসার শৈশব কেটেছে পশ্চিম ল্যাঙ্কাশায়ারের আপহোল্যান্ডে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মঞ্চের মানুষ। স্কেলমারসডেলের আর্টজ সেন্টারে নিয়মিত অভিনয় করতেন। পরে লিভারপুল ইনস্টিটিউট ফর পারফর্মিং আর্টসের সিক্সথ ফর্ম কলেজে ভর্তি হয়ে সংগীতনাট্যে পড়াশোনা করেন। চলতি বছরই সুযোগ পেয়েছিলেন লন্ডনের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ট্রিনিটি ল্যাবান কনজারভেটোয়ারিতে। সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল তাঁর ক্লাস।
থিয়েটারের পাশাপাশি শিশুদের জন্মদিন বা পার্টিতে জনপ্রিয় চরিত্রে রূপ ধরে পারফর্ম করতেন রোসা। আরিয়ানা গ্র্যান্ডে, আলাদিনের জ্যাসমিন কিংবা বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্টের বেল—এসব চরিত্র হয়ে তিনি হাসি ছড়িয়ে দিতেন ছোটদের মুখে।
সম্প্রতি ‘স্ক্রাম্পটিউস’ নামে একটি ভ্রাম্যমাণ প্রযোজনায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছিলেন রোসা। নাটকটি আয়োজন করছিল বেগারস বিলিফ কালেকটিভ। করশামের লাইব্রেরিতে সেই নাটকের একটি শোতেই তাঁর যাওয়ার কথা ছিল—সেই পথেই থেমে গেল জীবনের মঞ্চ।
রোসার বাবা আরও বলেন, ‘সে ছিল সবচেয়ে মেধাবী, সবচেয়ে সুন্দর এবং সবচেয়ে স্নেহময় মানুষ, যাকে আমি কোনো দিন ভুলতে পারব না।’
বন্ধু আর সহশিল্পীরা রোসাকে বলছেন ‘এক উজ্জ্বল তারা’—যার চলে যাওয়া শুধু থিয়েটার নয়, গোটা শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
এক প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীর স্বপ্ন থেমে গেল মঞ্চে ওঠার আগেই। যা থেকে যাবে, তা হলো তাঁর রেখে যাওয়া স্মৃতি আর অসমাপ্ত সম্ভাবনার হাহাকার।