টেকনাফে বইছে বাতাস, আতঙ্কে উপকূলবাসী

0
80
শাহপরীর দ্বীপ।

সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমালে’ পরিণত হতে পারে। ঝড়ের গতিপথ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপে বাতাস শুরু হয়েছে। সাগর ও নাফ নদীর পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ ফুট বেড়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপের মানুষ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপটি আরও শক্তি অর্জন করে শুক্রবার মধ্যরাতে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। শনিবার বিকেলের মধ্যে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। রোববার ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আর এ সময় উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে টেকনাফ শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে সীমান্ত সড়কের পূর্বে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা নাফ নদীর পাড়ে অবস্থিত শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া। সেখানে পাঁচ শতাধিক মানুষের বসবাস। এখনও ভাঙন থেমে নেই দ্বীপে। এমনকি বিলীনের পথে দু’টি বিদ্যালয়ের ভবন। এছাড়া গত বছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকার’ আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপ।

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনলে বুক ব্যথা শুরু হয়। আমরা নাফনদের তীরে প্রায় ২০০ পরিবার বসবাস করি। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই বলে নদের ধারেই আশ্রয় নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আসার খবরে আমরা সবাই খুব চিন্তিত থাকি। কেননা গত বছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘মোকায়’ আমাদের এখানকার লোকজনকে তছনছ করে দিয়েছিল।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘পুরো এলাকাটি উপকূল। প্রায় ৫০০ মানুষ নাফ নদের পাড়ে জীবনযাপন করছে। ঘূর্ণিঝড়ে প্রতি বছর আমার এলাকার মানুষ ঘরহারা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে সকাল থেকে বাতাস শুরু হয়েছে। ফলে নৌকা ও ট্রলারগুলো কূলে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। এছাড়া নাফনদের পাড়ে বসবাসকারীদের সতর্ক থাকাতে বলা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি দেখে তাদের সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

অন্যদিকে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে সকাল থেকে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রচণ্ড বাতাস শুরু হয়েছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা কবির আহমেদ বলেন, ‘বাতাস শুরু হয়েছে। এছাড়া অন্যদিনের তুলনায় সাগর উত্তালের পাশাপাশি পানিও বেড়েছে। দ্বীপবাসীর বসবাস সাগরের পাড়ে, যার কারণে আমরা ঘূর্ণিঝড় এলে খুব বেশি ভয়ে থাকি।’

আমরা সতর্ক আছি জানিয়ে সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস জনজীবন, মনে হচ্ছে বড় কিছু হতে যাচ্ছে। দ্বীপে সাগর উত্তাল রয়েছে। সকাল থেকে আকাশ মেঘ ও বাতাস শুরু হয়েছে। এছাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়েছে।

দ্বীপের বাসিন্দা খতিজা বেগম বলেন, ভাঙা ঘরে কোনোরকম জীবন পার করছি। এখন খুবই চিন্তিত আছি, যেন ঘূর্ণিঝড়ে শেষ সম্বলটুকুও হারিয়ে না যায়। গত বছর ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ঘরবাড়ি হারিয়েছি।

এ বিষয়ে টেকনাফ সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ সাফকাত আলী বলেন, আমরা মেডিকেল টিমসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া সাগর-নাফনদের কারণে আমরা সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপকে গুরুত্ব দিচ্ছি বেশি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.