টানা দাবদাহে চুয়াডাঙ্গায় দুর্বিষহ জনজীবন, আজ ৪১ ডিগ্রি

0
102
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের চৌরাস্তায় বৃহস্পতিবার দুপুরের চিত্র।

টানা দাবদাহে পুড়ছে চুয়াডঙ্গা। জেলাতে টানা ১২ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় ওঠানামা করছে। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় ৪১ এবং দুপুর ১২টায় ৩৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চৈত্রের শেষে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এ গরম চুয়াডাঙ্গার সর্বত্র, দু-এক দিনের মধ্যে কমার লক্ষণ নেই। জেলায় বইছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। দাবদাহের কারণে ধানের শিষ পুড়ে যাচ্ছে। সবজিরও ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। জেলা প্রশাসন থেকেও প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে।

আরও এক সপ্তাহ এমন দাবদাহ থাকতে পারে বলে জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস। কোনোভাবেই তাপমাত্রা কমছে না জেলায়। প্রতিদিনই বাড়ছে তাপমাত্রা। মাঝারি দাবদাহ চলমান রয়েছে। সূর্যের প্রখরতা বেশি। সড়কে ও বাইরে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ছে। পিচঢালা রাস্তা দিয়ে উঠছে গরমের উষ্ণতা। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় ৪১ এবং দুপুর ১২টায় ৩৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের আদ্রতা ১৫ শতাংশ।

দাবদাহে জনজীবন ও প্রাণিকূলের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নিমিষেই সড়ক ফাঁকা হয়ে পড়ছে। পবিত্র রমজান মাসে রোজাদাররা গরমে দুর্বল হয়ে পড়ছেন।

চৈত্রের শেষে এমন তাপপ্রবাহ বইলেও মাসের শুরুটা কিন্তু আরামদায়ক ছিল। এর কারণ ছিল বৃষ্টি। চৈত্র মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে বৃষ্টি ঝরেছে। চলতি এপ্রিলের ২ তারিখে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েকদিন ধরে চলা টানা বৃষ্টি শেষ হয়। এরপর অবশ্য দু-এক জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হয়েছে। তবে এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির দেখা নেই প্রায় কোনো স্থানে। বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে, টানা ১২ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। বুধবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় আজ বৃহস্পতিবার ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

টানা তাপপ্রবাহে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জনজীবন। তীব্র তাপদাহে এ জেলার খেটে খাওয়া মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। তীব্র গরম ও রোদের তাপের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যান-রিকশা চালকরা কাজ করতে না পেরে অলস সময়ও পার করছেন। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠান্ডা পরিবেশে স্বস্তি খুঁজছে মানুষজন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা-ঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। আবার অনেকে জরুরি প্রয়োজন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন। অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। জেলা সদরের হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও বেড়েছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী রোগীর সংখ্যা।

চুয়াডাঙ্গা সদরের কুলচারা গ্রামের শফিউল বলেন, ‘এত তাপ সহ্য করা কঠিন। জমিতে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারলাম না। এখন ছায়ায় বসে আছি। আজ কাজ শেষ করতে দেরি হবে। যে গরম পড়ছে, আর কাজ করতে পারব কিনা জানি না। ধানে সব শিশ বের হয়েছে, প্রচণ্ড রোদে তা পুড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন পানি দেওয়া লাগছে। যেখানে আগে সপ্তাহে দুদিন পানি দিলেই চলত।’

ভ্যানচালক মাহবুব বলেন, ‘ঈদের কেনাকাটা থাকলেও মানুষজন বাজারে আসছে না। তাই ভাড়াও হচ্ছে না, দুপুর হয়ে গেছে এখনও ৫০টাকা ভাড়া হয়নি। শুয়ে-বসে দিন কাটাচ্ছি। এভাবে চললে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়বে। ঈদের কেনাকাটা তো দুরের কথা।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.