
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে শিক্ষাসফরের চারটি বাস ডাকাতির কবলে পড়েছে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থেকে নাটোরের একটি পার্কের উদ্দেশে যাচ্ছিল শিক্ষাসফরের দলটি। আজ মঙ্গলবার ভোর সোয়া চারটার দিকে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাত দল বাসগুলোতে থাকা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মুঠোফোন, টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) ফোন করার পর পুলিশ এলে পালিয়ে যায় ডাকাতেরা।
বাসে থাকা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, ফুলবাড়িয়া উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের সোয়াইতপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক মিলে চারটি বাসে করে শিক্ষাসফরে রওনা হয়েছিলেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে স্কুল চত্বর থেকে তাঁদের চারটি বাস ছেড়ে যায়। তাঁরা নাটোরের গ্রিনভ্যালি পার্কের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। ভোর সোয়া চারটার দিকে শিক্ষাসফরের বাস চারটি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের লক্ষণের বাধা এলাকায় পৌঁছালে ডাকাত দলের কবলে পড়ে। গজারি বনের ভেতর দিয়ে চলা ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়কের পাশ থেকে একটি গাছ কেটে রাস্তা আটকে দেন ডাকাত দলের সদস্যরা।
ডাকাতির কবলে পড়া চারটি বাসের প্রথমটিতে ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান। আজ সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি বলেন, ‘রাতে চারটি বাস রওনা দিয়ে সাগরদীঘি এলাকায় গজারি বনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ রাস্তায় একটি গাছ পড়ে থাকতে দেখি। অন্তত ১০-১২ জনের ডাকাত দল হামলে পড়ে, সবার হাতেই ধারালো দেশীয় অস্ত্র। সবাই খুব ভয় পেয়ে যাই। ডাকাত দলের সদস্যরা পেছনের বাস থেকে মালামাল লুট শুরু করেন। এর মধ্যে আমরা ৯৯৯-এ ফোন করি। ডাকাত দলের সদস্যরা পেছনের তিনটি বাস থেকে ১০টি স্মার্টফোন, একটি হাতঘড়ি, ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও দেড় ভরির মতো স্বর্ণালংকার নিয়ে যান। পরে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ চলে আসায় ডাকাত দলের সদস্যরা পালিয়ে যান।’
খলিলুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ আসার পর বিস্তারিত ঘটনা শুনে যাঁদের মুঠোফোন নিয়ে গেছে, তাঁদের নম্বরগুলো নিয়ে গেছে। ওই সময় অনেকে ফেরত যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যেহেতু শিক্ষার্থীরা আনন্দ করার জন্য যাচ্ছিল, অনেকের অনুরোধে আমরা পিকনিক স্পটে যাই। সেখান থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশে ফিরছি’ বলে জানান তিনি।
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘ডাকাতির কবলে পড়ায় শিক্ষার্থীরা প্রচুর ভয় পেয়েছে। ডাকাতেরা চালকদের কাছ থেকেও টাকা নিয়ে গেছে। মারধর করেছে শিক্ষক-কর্মচারীদেরও। আমরা ফেরার পথে থানায় লিখিত অভিযোগ দেব।’
শিক্ষাসফরের বাসগুলো যে এলাকায় ডাকাতির কবলে পড়ে, সে এলাকায় সম্প্রতি ডাকাত দলের তৎপরতা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ বিষয়ে ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষাসফর শেষে ডাকাতির কবলে পড়া টিমটি ফেরার পর লিখিত অভিযোগ নিয়ে আইনি পদক্ষেপ শুরু করা হবে। তবে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক সব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি।’ তিনি আরও বলেন, যে সড়কটিতে ডাকাতির ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি উপজেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে। এই সড়কের অধিকাংশ এলাকা গহিন বন। ডাকাত দলের সদস্যরা ইলেকট্রিক করাত দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে গাড়ি আটকে দেয়। এই সড়কটি দিয়ে গাড়ি চলাচলও করে বেশি। বেশ কয়েক বছর এ ধরনের তৎপরতা বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। গহিন বনের কারণে পুলিশি তৎপরতা চালানো চ্যালেঞ্জিং জানিয়ে ওসি আরও বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি গ্রুপটিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে।’
ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ডাকাতির কবলে পড়া শিক্ষাসফরের দলটির আল্লাহর অশেষ রহমতে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। দূরে কোথাও শিক্ষাসফরে যেতে নিরুৎসাহিত করা হবে। যেতে ও ফিরতে রাত হয়, এমন কোনো স্পট বাছাই না করার জন্য শিক্ষকদের বলা হবে।’