এবার হিমাগারে আলু রেখে লাভের মুখ দেখছেন রংপুরের চাষি ও ব্যবসায়ীরা

তারাগঞ্জে এবার ৩ হাজার ৫০ ও বদরগঞ্জে ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে।

0
101
আলুর দাম বাড়ায় হিমাগারগুলোতে থেকে আলু বের করে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকেরা। গতকাল রংপুরের তারাগঞ্জের এনএন হিমাগারে

‘আলু তোলার পর কেজিতে দুই টাকা বেশি লসে চার ভাগের তিনভাগ বেচাছি। সেই আলুত আইজ কেজিতে ১২ টাকা লাভ হওছে। দ্যাশোত কখন কি হওছে, বুঝা মুশকিল। কিন্তু হামরা এইটা বুঝি গেছি কৃষকের যখন আলু থাকে না, তখনে দাম বাড়ে। লাভ হয় ব্যবসায়ীর।’

কথাগুলো রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী গ্রামের প্রান্তিক আলুচাষি শাহরিয়ার প্রামাণিকের। গতকাল বৃহস্পতিবার এনএন হিমাগারে আলু বিক্রি করতে এসে আলুর বাজার ভালো পেয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

শাহরিয়ার বলেন, ১ একরে ৯৬ হাজার ৬৪০ টাকা খরচে তিনি আলু পেয়েছেন ৮ হাজার ৩০০ কেজি। এতে প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ হয়েছে তাঁর প্রায় ১২ টাকা। আলু উত্তোলনের পর ১০ টাকা কেজি দরে জমিতে বিক্রি করে দেন ৬ হাজার কেজি। বাকি আলু তিনি হিমাগার জাত করেন। সেই আলু ২৭ টাকা কেজি দরে গতকাল বিক্রি করেছেন।

ওই হিমাগারে আলু বিক্রি করতে আসা সরকারপাড়া গ্রামের কাওসার সরকার বলেন, ‘আলু তোলার পর তা বিক্রি করে বোরো চাষ করতে হয়। কিন্তু উত্তোলন মৌসুমে আমরা ন্যায্য দাম পাই না। যখন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা কম দামে আমাদের কাছে আলু কিনে স্টক করে, তখনই আলু দাম বাড়ে। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবান। বীজের জন্য ৩০ বস্তা আলু রেখেছিলাম। টাকার প্রয়োজন, দামও ভালো, তাই বিক্রি করলাম। এই দাম যদি আলু তোলার পর পাওয়া যেত, তাহলে সোনায় সোহাগ হতো।’

আলু ঊর্ধ্বমুখে বাজারে ভালো দাম পেয়ে এমন আক্ষেপ শুধু শাহরিয়ার ও কাওসারেই নয়; রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলার অনেক প্রান্তিক আলুচাষিদের। তবে বর্তমান দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তারাগঞ্জ এবার ৩ হাজার ৫০ ও বদরগঞ্জে ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। উৎপাদনে হয়েছে তারাগঞ্জে ৭৪ হাজার ১১২ মেট্রিক টন ও বদরগঞ্জ ৪৬ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। দুই উপজেলার ছয়টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা যায় সাড়ে ৮ লাখ বস্তা (প্রতি ৫০ কেজি)। ছয় হিমাগার থেকে এ পর্যন্ত আলু বের হয়েছে প্রায় এক লাখ বস্তা।

তারাগঞ্জে আলু ব্যবসায়ী মোস্তফা রহমান বলেন, এবার হিমাগারে আলু রেখে মোটামুটি ভালোই লাভ হচ্ছে। অন্যবারের ক্ষতি এবারে পুষিয়ে যাবে।

গতকাল হিমাগার ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি কার্টিনাল, ইস্টারিকস জাতের আলু বিক্রি হয়েছে ২৭ টাকা, সাদা জাতের গ্রানুলা, ডায়মন্ড ২৫ টাকা, শীলজাতের আলু ৩৯ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ও খুচরা বাজারে লালজাতের কার্টিনাল, ইস্টারিকস জাতের আলু ৩২-৩৩ টাকা, গ্রানুলা, ডায়মন্ড ২৮-৩০ টাকা ও শীল জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ টাকা দরে।

বদরগঞ্জের আমরুল বাড়ি গ্রামের আলুচাষি ওবায়দুল হক বলেন, ‘প্রত্যেকবার যদি এমতোন দাম পাইনো হয়, তা হইলে আর অভাব থাকলি না হয়।’

বদরগঞ্জের জামুবাড়ি গ্রামের আলুচাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আলু চাষ করি অনেক লস খাছি। এমনও হইছে হিমাগারোত আলু থুইয়ার আর তুলি নাই। এইবার হিমাগারো আলু থুয়া লাভের মুখ দেখুছি। ভালো লাভ হওছে।’

বদরগঞ্জের শাহজালাল হিমাগারের ব্যবস্থাপক আহসান হাবীব বলেন, বাজারে টান পড়ায় এবারে মে মাসের শুরুতে হিমাগার থেকে আলু বের করা শুরু হয়েছে, যা অতীতে কখনো এমনটা হয়নি। সাধারণত ১৫ জুন থেকে আলু বের হয়। বাজারে আলুর দামও এবার অনেক বেশি। এতে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.