এই না হলে কি আর তিনি মহাতারকা! হাঁটুর বয়সী এক ছেলের কাছে হেরে যাওয়ার পর চোখের সমস্যাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে চাননি নোভাক জোকোভিচ। এটা সত্য এবং সবাই দেখেছেনও যে জোকোভিচ মায়ামিতে আজ এটিপি মাস্টার্স ১০০০ টুর্নামেন্টের ফাইনালে চোখে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ নিয়ে খেলেছেন। কিন্তু সেটাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে কৈশোরের প্রান্তে থাকা ইয়াকুব মেনসিকের কীর্তিকে কোনোভাবেই ছোট করতে চাননি জোকোভিচ।
মেনসিকের কাছে ৭–৬ (৭–৪), ৭–৬ (৭–৪) গেমে হারার পর ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে সার্বিয়ার টেনিস তারকাকে যখন চোখের সমস্যার কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়, তিনি উল্টো সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার জন্য এটা দুর্ভাগ্যের। দুটি টাইব্রেকার, বৃষ্টির কারণে (৬ ঘণ্টা) দেরিতে শুরু হওয়া অদ্ভুত এক ম্যাচ, অদ্ভুত এক দিন। আমিও কোর্টে সেরা ছন্দে ছিলাম না; কিন্তু যা হয়েছে তো হয়েছেই। তার জয়টাকে ছোট করার কিছু নেই।’ জোকোভিচ এরপর যোগ করেন, ‘সত্যি আমি এসব (চোখের সমস্যা) নিয়ে কথা বলতে চাই না। কিছু বিষয় ছিল, কিন্তু তা বলতে চাই না…শুধু তাকে অভিনন্দন জানাতে চাই। আমি এমন কিছু বলতে চাই না, যেটাকে অজুহাত মনে হয়।’

জোকোভিচ এটিপি মাস্টার্স ১০০০ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন একটা মাইলফলক স্বপ্ন নিয়ে। ফাইনাল জিতলেই জিমি কোনর্স (১০৯) ও রজার ফেদেরারের (১০৩) পর তৃতীয় খেলোয়াড় ক্যারিয়ারে শততম শিরোপার স্বাদ পেতেন। সেটি হয়নি বলে মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেই কষ্ট চেপেই হয়তো সার্বিয়ান তারকা বললেন, ‘হারতে কখনোই ভালো লাগে না; কিন্তু সত্যি বলতে কি অল্প যে কয়েকজন খেলোয়াড়ের কাছে হেরেও ভালো লাগতে পারে, তাদের মধ্যে সে একজন।’ মেনসিকের কাছে হেরেও ‘শান্তি’র কারণটাও জানিয়েছেন জোকোভিচ, ‘তার যখন ১৫ বা ১৬ বছর বয়স, তখন থেকে তাকে খেলতে দেখছি এবং একবার তাকে আমি আমন্ত্রণও জানিয়েছিলাম। আমরা একসঙ্গে অনুশীলন করেছিলাম।’
সেই দিনগুলো ভোলেননি মেনসিকও। বেলগ্রেডে নিজের ক্লাবে জোকোভিচ তাঁকে অনুশীলনের জন্য যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, সেটা আজও মেনসিকের স্মৃতিতে অমলিন। ম্যাচ শেষে সেসব বিষয়ে কথা বলার এক ফাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, জোকোভিচই তাঁর আদর্শ। ম্যাচ শেষে পুরস্কার অনুষ্ঠানে জোকোভিচকে বলেছেন, ‘আমি ছোটবেলায় আপনাকে দেখেই টেনিস খেলা শুরু করেছি। কোনো টেনিস খেলোয়াড়ের জন্য একটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে আপনাকে হারানোর মতো কঠিন কাজ আর নেই।’ কঠিনতম এ কাজটি করার পথে কিছু কীর্তিও গড়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের ১৯ বছর বয়সী খেলোয়াড়। দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছেন মেনসিক। ২০২২ সালে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে শিরোপাটি জিতেছিলেন স্পেনের কার্লোস আলকারেজ। সে সময় আলকারেজের বয়স ছিল ১৮ বছর।
কথা বলতে বলতেই মেনসিক জানিয়েছেন, মায়ামিতে এই যে কীর্তি গড়লেন; এর কিছুই না–ও হতে পারত। প্রথম রাউন্ডের ম্যাচটি না খেলেই যে চলে যেতে চেয়েছিলেন মেনসিক! এটিপির প্রথম শিরোপা জেতা মেনসিক সেটা জানালেন এভাবে, ‘(স্পেনের রবার্তো বাউতিস্তা আগুরে বিপক্ষে) আমার প্রথম ম্যাচের এক ঘণ্টা আগে আমি টুর্নামেন্ট থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার কাগজ হাতে নিয়ে বসে ছিলাম। কারণ ছিল আমার প্রচণ্ড হাঁটুর ব্যথা। আমি ভাগ্যবান ছিলাম যে রেফারি সেই সময় লাঞ্চে ছিলেন।’
রেফারি খেতে যাওয়ায় নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার কাগজ জমা দিতে পারেননি মেনসিক। সেই সময় তাঁর ফিজিও চোটের পরিচর্যা করছিলেন। ফিজিও এমন কিছু করেছিলেন, দ্রুতই ব্যথা উধাও হয়ে যায় মেনসিকের। এরপর যা হয়েছে, তা ইতিহাস ছাড়া আর কী!