জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণপ্রতিরোধ ও আত্মত্যাগের স্মরণে সর্বস্তরের নাগরিক উদ্যোগে রাজধানীতে নির্মাণ করা হবে ‘গণমিনার’। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গণমাধ্যমকর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে ‘গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি এসব তথ্য জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও স্থপতি কামার আহমাদ সাইমনসহ বিশিষ্ট নাগরিকেরা।
সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা জানান, গণমিনারের স্থান হিসেবে বীর উত্তম মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান রোড ও বিজয় সরণির মধ্যবর্তী সবুজ চত্বরকে নির্বাচন করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এরই মধ্যে গণমিনার নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ, অর্থ ও প্রকৌশল সহযোগিতার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে জাতিসংঘ স্বীকৃত (গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে) ১ হাজার ৪০০ শহীদের নাম ও পরিচিতি গণমিনারে খোদাই করে সংরক্ষণ করা হবে।
গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, কমিটিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুক্ত হচ্ছেন। অন্তর্ভুক্তিমূলক এ নাগরিক উদ্যোগটির লক্ষ্য, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং শহীদদের স্মৃতিকে স্মারকরূপে সংরক্ষণ করা; যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মানুষের আত্মত্যাগ ও প্রতিরোধের চেতনা সঞ্চারিত হয়।
বক্তারা বলেন, জুলাই ২০২৪ ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যেখানে আপামর জনগণ স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ নির্যাতিত হয়েছেন, আহত হয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন। জুলাই গণপ্রতিরোধে জাতির প্রতিবাদী সত্তার স্ফুরণ ঘটে। সেই সত্যকে স্মরণে রাখতে গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটি একটি স্থায়ী স্মারক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে আরও জানানো হয়, এই ভূখণ্ডে গত ২৫০ বছরের প্রতিরোধ ও লড়াইয়ের ইতিহাসের চিত্রও গণমিনারে তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে। এই গণমিনার হবে এমন এক স্মরণস্থল, যা রাজনৈতিক বিভাজন অতিক্রম করে সব মত ও পথের মানুষের সম্মিলিত গণ–উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হবে। গণমিনার বাস্তবায়নে গণমানুষের সম্পৃক্ততার লক্ষ্যে গণচাঁদা সংগ্রহেরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের প্রভাষক অলিউর সান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংগঠক অলিক মৃ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন, কবি ও লেখক আলতাফ শাহনেওয়াজ, লেখক ও গবেষক ইলিরা দেওয়ানসহ আরও অনেকে।