জুলাই গণহত্যা: ‘প্রমাণ ধ্বংসের চেষ্টা চালানো হয়েছে, নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছে জাতিসংঘ’

0
6
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি

জুলাই-আগস্টের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দল সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করেছে। দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহের পরই জানা গেছে সরকারপ্রধানের সরাসরি নির্দেশ ছিল গণহত্যায়। এমনকি তৎকালীন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা নির্যাতনের প্রমাণ ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়েছে এসব কথা বলেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি।

জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের ঘটনায় ২৩০টিরও বেশি সাক্ষাৎকার, ১৫৩টি মেডিকেল ফরেনসিক, হাজারের বেশি ফটো-ভিডিও ও ৯৫৯টি অভিযোগ বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দল। গতকাল বুধবার তারা প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাতে জানায় ১৪শ’র উপরে মানুষ নিহতের ঘটনার প্রমাণ মিলেছে। যার মধ্যে শিশু ১২ শতাংশ।

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনের মূল লক্ষ্য ও অনুসন্ধান পদ্ধতি নিয়ে যমুনা টেলিভিশনকে রাভিনা শামদাসানি জানান, তদন্ত দলের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব ছিল না।

তিনি বলছিলেন, আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়নে সহায়তা করা। আমরা ২৩০ এর বেশি সাক্ষাৎকার নিয়েছি— ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী, চিকিৎসক, আইনজীবী, সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তথ্য যাচাই করার জন্য আমরা ডিজিটাল ফরেনসিক বিশ্লেষণ, চিকিৎসা-ফরেনসিক বিশ্লেষণ এবং অস্ত্রের ব্যবহারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি।

আন্দোলন দমাতে ও শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি অস্ত্র চালানোর নির্দেশনা ছিল তৎকালীন সরকার প্রধানের- এ সংক্রান্ত দালিলিক প্রমাণ আছে তদন্ত দলের কাছে।

এ নিয়ে রাভিনা শামদাসানি বলেন, আমরা দলিল-প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, যেখানে দেখা গেছে যে আন্দোলন দমনে উচ্চপর্যায়ের নির্দেশ ছিল। একাধিক সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য একসঙ্গে মিলিয়ে আমরা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছি।

এই ধরনের ভয়াবহ ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে, সেজন্য কাঠামো ও আইনগত সংস্কারের তাগিদ দিয়েছে জাতিসংঘ। করেছে দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের সুপারিশ। এমনকি বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার কথা বলা আছে প্রতিবেদনে।

রাভিনা শামদাসানি বলেন, সরকার পরিবর্তন হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার ব্যবস্থায় কর্মরত অনেক কর্মকর্তা পরিবর্তিত হয়নি। ফলে পূর্ববর্তী নিপীড়নমূলক পদ্ধতি, যেমন আটক অবস্থায় নির্যাতন বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা দায়েরের প্রবণতা এখনও রয়ে গেছে। আমরা সুপারিশ করছি যে বাংলাদেশ যেন এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠায়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সম্পূরক ভূমিকা দেশীয় বিচার ব্যবস্থার ঘাটতি পূরণে সহায়ক হতে পারে।

প্রতিবাদকারী, পথচারী এমনকি নির্বিচার গ্রেফতারের সময় অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এমনকি মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ ধ্বংসের চেষ্টা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। ফলে জাতিসংঘের সুপারিশ হলো ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

রাভিনা শামদাসানি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ ধ্বংস করার চেষ্টার প্রমাণ পেয়েছি আমরা। নিরাপত্তা বাহিনী চিকিৎসা কর্মীদের চাপ দিয়েছে যাতে মৃত্যুর কারণ ‘দুর্ঘটনাজনিত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, বুলেট ইনজুরি নয়। প্রতিবেদনের ২৫৯ নম্বর অনুচ্ছেদে এটি নথিভুক্ত করা হয়েছে।

জাতিসংঘরে এই কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাও নজরে রেখেছে সংস্থাটি। সুষ্ঠু নির্বাচন পদ্ধতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফেরাতে সহায়তা করবে জাতিসংঘ।

আহমেদ রেজা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.