মিথ্যাচারের মাধ্যমে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের অবদানকে মুছে ফেলা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এই কথাও ভুলতে পারি না যে, শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ তার বাড়ির সিঁড়িতে পড়ে ছিল…. তারপরে আওয়ামী লীগের নেতারা সরকার গঠন করেছিলেন। যারা আজকে মিথ্যা প্রচার চালায় যে, এখানে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন তাদের একটাই উদ্দেশ্য- জিয়াউর রহমানকে হেয় প্রতিপন্ন করা। তাকে একেবারে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘আজ কত বছর হয়ে গেল- জিয়াউর রহমানের নাম কি মুছে ফেলতে পেরেছে? পারে নাই, পারে না। যে সমস্ত ক্ষণজন্মা মানুষ ইতিহাস তৈরি করে, যারা একটা রাষ্ট্রের জন্মের জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করে, যারা জনগণের কল্যাণের জন্য একটা রাষ্ট্র নির্মাণের সমস্ত ভিত্তি তৈরি করে, তাদের এভাবে মুছে ফেলা যায় না।’
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন, তা মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এখন ওরা এমন সব অলিক গল্প ফেঁদে বলে যে, শহীদ জিয়াউর রহমান প্রয়াত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এটা হচ্ছে শুধু ইতিহাসকে বিকৃত করা। যে আন্দোলন শুরু হয়েছে জনগণের গণতন্ত্র ফেরাতে, সেই আন্দোলনকে বিপথে পরিচালিত করা। তখন তো বিএনপির জন্মই হয়নি। শহীদ জিয়াউর রহমান তখন সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন না। তিনি ছিলেন ডেপুটি প্রধান। যিনি সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন, নৌবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান- তারা ওই দুর্ঘটনার পরে যখন খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছিল, তখন তারা সবাই স্যালুট করে খন্দকার মোশতাকের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করেছিল।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পরে দুঃশাসনের রাজ্য তৈরি করেছিল। তারা তাদের মতো করে এদেশকে একটা লুটপাটের রাজত্ব তৈরি করেছিল। একেবারে পর এক তাদের নিজেদের তৈরি সংবিধান ভেঙেচুরে জরুরি অবস্থা, বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং সবশেষে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে সিপাহী-জনতার বিপ্লবে যখন দায়িত্ব দেওয়া হলো তখন তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে আওয়ামী লীগ করেছিল একদলীয় শাসন ব্যবস্থা, সমস্ত পত্রিকা বন্ধ, মানুষের অধিকার হরণ। আর জিয়াউর রহমান করলেন বহুদলীয় গণতন্ত্র- সবাই রাজনীতি করবে, সংবাদপত্রের ওপর বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হবে, মানুষ গণতান্ত্রিকভাবে তাদের কথাগুলো বলতে পারবে, মুক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশ গভীর সংকটে আছে। এই সংকট থেকে মুক্তির পথ আমাদেরকে দেখান শহীদ প্রেসিডেন্ট নেতা জিয়াউর রহমান। কারণ, ১৯৭১ সালে যখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে, এমনকি যারা তখন পাকিস্তান সরকার ইয়াহিয়া খানের সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছিলেন কীভাবে একটা আপসরফা করা যায়, ফেডারেশন করা যায় কি না; সেই সময়ে জিয়াউর রহমান বুকে সাহস নিয়ে, বল নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। এটা একটা বিরল ব্যাপার। কোনো মানুষের পক্ষে এটা সম্ভব না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্যদিকে তিনি (জিয়াউর রহমান) তার মেধা, দক্ষতা, সততা দিয়ে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশেকে একটি সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সময়ে বাংলাদেশ হয়েছে ইমার্জিং টাইগার। আর এখন এটাকে বলা হচ্ছে ফ্যাসিবাদী লুটেরা এবং জনগণের সম্পদ হরণকারী একটা সরকার। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।’
জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণীর এই অনুষ্ঠান হয়। এতে তিন পর্বে মোট ৬৯ জনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে জিহাদ ইবনে ইমরান, মোস্তাকিম হাসান, হুমায়রা জান্নাত প্রার্থনা, মাধ্যমিক স্তরে এফতেখার এনাম নাহিদ, তালাম মাহমুদ নিবাস, আবু হাসান নাহিয়ান এবং উচ্চতর ও উন্মুক্ত স্তরে কানিজ ফাতেমা কনিক, আজম ইকবাল শিপন ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল নোমান নিজ নিজ বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন।
রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সঞ্চালনায় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ইসরাফিল প্রামাণিক, শামসুজ্জামান মেহেদী প্রমুখ শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।