বাংলাদেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও মানুষের সৃজনশীলতা মিলে উৎপাদিত ১১টি পণ্য এ পর্যন্ত ভৌগোলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন বা জিআই) স্বীকৃতি পেয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের আরও পাঁচটি পণ্য এই তালিকায় যুক্ত হতে পারে। এ ছাড়া সাতটি পণ্য যাচাই-বাছাই তালিকায় রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নীতিমালা অনুসারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বাংলাদেশের পণ্যের ক্ষেত্রে এই স্বীকৃতি ও সনদ প্রদান করে। যারা জিআইয়ের জন্য আবেদন করেন, তাঁদের দেওয়া হয় মেধাস্বত্ব। চাইলেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। বেশ কিছু প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। আবেদনকারী কর্তৃপক্ষ বা ব্যক্তিকে কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি যে মৌলিকভাবে শুধু বাংলাদেশেই হয়, তার প্রমাণ দিতে হয়। ডিপিডিটির একটি কমিটি তা মূল্যায়ন করে স্বীকৃতি দেয়। এর পর সংস্থাটির জার্নালে তা প্রকাশ করা হয়। যদি কেউ এ পণ্য নিয়ে আপত্তি না তোলে তাহলে সনদ দেওয়া হয়।
ডিপিডিটি সূত্র জানায়, বগুড়ার দই ও দেশের শীতলপাটি, শেরপুরের তুলসীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম– এই পাঁচটি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে আবেদনকারীরা প্রায় সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন। এসব তথ্য এরই মধ্যে জার্নালে প্রকাশ পেয়েছে। এ বিষয়ে কারও আপত্তি না থাকলে দুই মাসের মধ্যে এসব পণ্যের চূড়ান্ত জিআই মর্যাদা দেওয়া হবে। বাকি সাতটি পণ্যের সবগুলো জিআই মর্যাদা পাবে কিনা, তা আবেদনকারীদের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত, যুক্তি ও অন্য কেউ আপত্তি করে কিনা তার ওপর নির্ভর করছে।
ডিপিডিটি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় জামদানি শাড়ি। এর পর একে একে স্বীকৃতি পেয়েছে ইলিশ, ক্ষীরশাপাতি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি এবং দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল। সর্বশেষ গত মাসে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম এই তালিকায় স্থান পেয়েছে।এ পরিস্থিতিতে আজ বুধবার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস-২০২৩ পালিত হচ্ছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা ত্বরান্বিতকরণে নারী এবং মেধাসম্পদ।’ সরকারি- বেসরকারি সংস্থার নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে।
ডিপিডিটির এক্সামিনার ( পেটেন্ট) নীহার রঞ্জন বর্মণ জানান, তিন শ্রেণির পণ্যকে জিআই মর্যাদা দেওয়া হয়– প্রাকৃতিকভাবে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, কৃষি ও হস্তশিল্প পণ্য। কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় আঞ্চলিকভাবে কোনো পণ্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে, সেই পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ জন্য কোনো সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে তথ্য-উপাত্তসহ ডিপিডিটির কাছে আবেদন করতে হয়। প্রতিষ্ঠানটি যাচাই-বাছাই শেষে সনদ দেয়। এর পর দেশের মধ্যে একক মর্যাদাসম্পন্ন হয় ওই পণ্য।
ডিপিডিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার (ডব্লিউআইপিও এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, জিআই সনদপ্রাপ্ত পণ্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাজারজাতে সুবিধা হয়। একই সঙ্গে রপ্তানিতে সুবিধা পাওয়া যায়। এ ছাড়া পণ্য ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে, আসল পণ্য পেতে ক্রেতাদেরও সুবিধা হয়। কোনো পণ্য জিআই সনদ পেলে ক্রেতারা নিশ্চিত থাকতে পারেন, পণ্যটি গুণাগুণসম্পন্ন। ডিপিডিটি আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের নীতিমালা অনুযায়ী পণ্যের জিআই সনদ প্রদানে কাজ করছে। আগামী বছর থেকে এ কাজে আরও গতি আসবে। তখন প্রতি মাসে কোনো না কোনো পণ্যের জিআই প্রদান করা সম্ভব হবে।