‘জালিবি’ অভিনেত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু, ময়নাতদন্তে উঠে এল ভয়াবহ চিত্র

0
19
মডেল ও অভিনেত্রী হুমাইরা আসগর।

গত মঙ্গলবার পাকিস্তানি অভিনেত্রী ও মডেল হুমাইরা আসগর আলির মরদেহ ৯ মাস পর করাচির এক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভয়াবহ ও গা শিউরে ওঠা নানা তথ্য—তাঁর দেহ ছিল পচে নষ্ট হওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কালো হয়ে গিয়েছিল, মুখমণ্ডল অচেনা হয়ে গিয়েছিল এবং দেহের চারপাশে ছিল পোকামাকড়ের উপস্থিতি।

বাড়িওয়ালার অভিযোগেই খোঁজ মেলে
পাকিস্তানের গণমাধ্যম জিও নিউজ জানায়, হুমাইরার মরদেহ করাচির অভিজাত এক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার করে পুলিশ ও আদালতের নিযুক্ত প্রতিনিধি। ফ্ল্যাট খালি করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, ভেতরে পড়ে আছে একটি সম্পূর্ণ পচে যাওয়া দেহ। এ ঘটনায় শোক ও বিস্ময় ছড়িয়েছে পাকিস্তানের বিনোদন অঙ্গনে।
পুলিশ জানায়, বাড়িওয়ালার অভিযোগ ছিল—হুমাইরা কয়েক মাস ধরে ভাড়া দেননি এবং যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই আদালতের আদেশে ফ্ল্যাটে ঢুকে তারা মরদেহ খুঁজে পায়। যদিও শুরুতে খবর ছড়িয়েছিল, নিয়মিত ভাড়া দিতেন অভিনেত্রী।

মরদেহের ভয়াবহ অবস্থা
ময়নাতদন্তে বলা হয়েছে, হুমাইরার দেহ ছিল ‘অগ্রসর পচনের স্তরে’। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা জানান, শরীরের প্রধান অঙ্গগুলো ছিল অচেনা রূপে এবং মুখমণ্ডলের কোনো বৈশিষ্ট্য বোঝার উপায় ছিল না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘শরীরের বেশির ভাগ অংশে পেশি ছিল না। হাড় স্পর্শ করলেই ভেঙে যাচ্ছিল। মস্তিষ্ক পুরোপুরি পচে গিয়ে দেহের অভ্যন্তরে একটি কালো জৈব পদার্থে পরিণত হয়েছিল।’ আরও উল্লেখ করা হয়, হাড়ে কোনো ভাঙা বা ক্ষতের চিহ্ন নেই, তবে জয়েন্টের কার্টিলেজও ছিল না।

মডেল ও অভিনেত্রী হুমাইরা আসগর। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
মডেল ও অভিনেত্রী হুমাইরা আসগর। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

দেহের চুলে পাওয়া গেছে বাদামি রঙের পোকা। তবে ময়নাতদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে, ম্যাগট বা শুঁয়াপোকা দেখা যায়নি। এতে ধারণা করা হচ্ছে, মরদেহ যে পরিবেশে পড়ে ছিল, সেটি অপেক্ষাকৃত শুকনা ছিল এবং তাপমাত্রা দীর্ঘদিন অপরিবর্তিত ছিল।

মৃত্যুর কারণ এখনো নিশ্চিত নয়
দেহ এতটাই পচে গিয়েছিল যে মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। তবে ফরেনসিক পরীক্ষার পাশাপাশি ডিএনএ বিশ্লেষণ ও টক্সিকোলজি রিপোর্টের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে।

শেষ ফোনকল ২০২৪ সালের অক্টোবরে
আরব নিউজকে করাচির ডিআইজি সৈয়দ আসাদ রেজা জানান, হুমাইরার মুঠোফোনের কল ডিটেইল রেকর্ড অনুযায়ী সর্বশেষ কল করা হয়েছিল ২০২৪ সালের অক্টোবরে। প্রতিবেশীরাও জানান, শেষবার তাঁকে দেখতে পেয়েছিলেন সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে।

অক্টোবরে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিল না দেওয়ায়। অ্যাপার্টমেন্টে কোনো জেনারেটর বা বিকল্প বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা ছিল না। পানির পাইপ ছিল শুকনা, মরিচা পড়ে গিয়েছিল, খাবারের জারগুলোয় ছয় মাস আগে পচন ধরেছিল। ব্যালকনির একটি দরজা খোলা ছিল, যেখান দিয়ে বাতাস প্রবেশ করত।

মডেল ও অভিনেত্রী হুমাইরা আসগর। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
মডেল ও অভিনেত্রী হুমাইরা আসগর। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

ফ্ল্যাটে দুর্গন্ধ টের পাননি কেউ
যেহেতু ওই তলায় হুমাইরার অ্যাপার্টমেন্ট ছাড়া আর কেউ থাকতেন না, তাই কেউ দুর্গন্ধ টের পাননি। যেসব প্রতিবেশী ফেব্রুয়ারিতে ফিরে আসেন, তাঁরা জানান, তখন দুর্গন্ধ থাকলেও খুব হালকা ছিল এবং তাঁরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি।

পরিবার শুরুতে মরদেহ গ্রহণে অনিচ্ছুক ছিল
পুলিশ শুরুতে জানায়, হুমাইরার পরিবার মরদেহ নিতে চায়নি। তবে পরে ভাই নাভিদ আসগর করাচিতে এসে আইনিপ্রক্রিয়া শেষে মরদেহ গ্রহণ করেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা এখানে এসেছি, সব আইনিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মরদেহ বুঝে নিয়েছি।’
নাভিদ আসগর জানান, ‘হুমাইরা সাত বছর আগে লাহোর থেকে করাচিতে চলে আসেন এবং পরিবার থেকে দূরত্ব তৈরি হয়। প্রায় দেড় বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না। এ কারণেই আমার বাবা বলেছিলেন, যদি কোনো জরুরি অবস্থা হয়, তাহলে সেখানেই দাফন করো।’

কে ছিলেন হুমাইরা আসগর?
লাহোরের মেয়ে হুমাইরা ২০১৫ সালে মিডিয়ায় পথচলা শুরু করেন। ছোট পর্দায় ‘জাস্ট ম্যারেড’, ‘এহসান ফারামোশ’, ‘গুরু’ ও ‘চল দিল মেরে’র মতো সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন। বড় পর্দায় কাজ করেছেন ‘জালিবি’ ও ‘লাভ ভ্যাকসিন’ (২০২১) চলচ্চিত্রে।
২০২২ সালে এআরওয়াই ডিজিটালের রিয়েলিটি শো ‘তমাশা ঘর’–এ অংশ নিয়ে আলোচনায় আসেন। ২০২৩ সালে ‘ন্যাশনাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ডস’–এ সেরা সম্ভাবনাময় অভিনেত্রীর পুরস্কার পান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.