কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ফিল্মি স্টাইলে যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে বোরকা পরা ৩ দুর্বৃত্ত গুলি করে হত্যা করে। কিলিং মিশন শেষে তারা দৌঁড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ সময় একজনের মুখের আবরণ খুলে গেলেও এখন পর্যন্ত তাকে শনাক্ত করা যায়নি। চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এসব তথ্য মিলেছে।
১ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ওই সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ, পিবিআই, র্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দুর্বৃত্তদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে মাঠে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছে। আজ সোমবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গতকাল রোববার রাত পৌনে ৮টার দিকে দাউদকান্দির গৌরীপুর পশ্চিম বাজারে বোরকা পরা ৩ দুর্বৃত্ত যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে।
নিহত জামাল হোসেন পার্শ্ববর্তী তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি উপজেলার জিয়ারকান্দি নোয়াগাঁও গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। তিনি গৌরীপুর পশ্চিম বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন এবং থাই গ্লাসের ব্যবসা করতেন।
এ ঘটনার পর থেকে গৌরীপুর বাজারসহ স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আজ সোমবার বিকেল পৌন ৪টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৪৪ মিনিটে বোরকা পরিহিত ৩ জন হেঁটে মসজিদের পাশ থেকে পূর্ব দিকে জামাল হোসেনের ভাড়া বাসার দিকে যাচ্ছেন। এর এক মিনিট ২০ সেকেন্ডের মাথায় একই পথ ধরে ওই তিন দুর্বৃত্ত দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় একজনের মুখের আবরণ খুলে যায়। আরেকজনের হাত থেকে অস্ত্র পড়ে যায়। পরে অস্ত্রটি কুড়িয়ে নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্তসংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জামাল হোসেন গৌরীপুর পশ্চিম বাজার এলাকায় বাসার সামনে একা দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় পশ্চিম দিক থেকে দুর্বৃত্তরা বোরকা পরে আসে। একজন এসে প্রথমে দাঁড়িয়ে থাকা জামাল হোসেনকে ধাক্কা দেয়। এ সময় জামাল এক দুর্বৃত্তকে ঝাপটে ধরেন। তখন আরেক দুর্বৃত্ত এসে লাথি মেরে জামালকে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর দুর্বৃত্তরা পর পর তিনটি গুলি করে পশ্চিম দিক দিয়ে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, গুলির শব্দ শুনে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। পরে তারা জামাল হোসেনকে প্রথমে গৌরীপুর সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ১০টার দিকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গৌরীপুর বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, জামাল হোসেন এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ঘাতকরা তার পূর্ব পরিচিত হতে পারে। তাই হয়তো তারা জামাল হোসেনের অবস্থান নিশ্চিত হয়েই বোরকা পরে ঘটনাস্থলে এসেছিল। তারা পেশাদার খুনি হতে পারে।
তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বিবদমান পক্ষগুলোর দ্বন্দ্বের জেরে এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলেও ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল ছাড়াও আশেপাশে থাকা বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের হাতে এসেছে। এসব ফুটেজে হত্যায় অংশগ্রহণকারীদের দেখা গেছে। এ ছাড়া দুর্বৃত্তদের ঘটনাস্থলে যাওয়া ও কিলিং মিশন শেষে ফিরে যাওয়ার দৃশ্য রয়েছে।
র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই এবং ছায়াতদন্ত শুরু করি। নিহত জামাল হোসেনের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘাতকদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
দাউদকান্দি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ আলমগীর ভূঞা জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনও কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে আইন-শঙ্খলাবাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা ঘাতকদের শনাক্তের চেষ্টা করছে। এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি।
নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ ঢাকা থেকে বাড়িতে এনে দাফনের পর আজ রাতে মামলা হতে পারে বলে জনান এই পুলিশ কর্মকর্তা।