রাজধানীর রায়েরবাজারের বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে গিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার হন দু’জন জাপানি পর্যটক। তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় জাপানি ইয়েন, টাকা, আইফোন, ক্রেডিট কার্ড। এরপর লুণ্ঠিত অর্থ নিয়ে দুই ছিনতাইকারী ‘ফুর্তি করতে’ যায় কক্সবাজার। পরে জলপ্রপাত দেখতে তারা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পৌঁছায়। সেখান থেকেই তাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো– জিহাদুল ইসলাম মামুন ও আবু রাসেল প্রত্যয়। এর আগে তাদের সহযোগী খায়রুল ইসলাম স্বপনকে মোহাম্মদপুর বোটঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে শুক্রবার বিকেলে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক তাঁর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। তিনি জানান, গত ২৪ এপ্রিল দু’জন জাপানি নাগরিক শুক্রাবাদ এলাকার নন্দিনী হোটেলে ওঠেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে তারা রায়েরবাজারে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে যান। আনুমানিক রাত ৯টার দিকে তারা কবরস্থান থেকে বের হতে চাইলে অজ্ঞাতপরিচয় তিন যুবক তাদের ভুল পথ দেখিয়ে ভেতরের দিকে নিয়ে যায়। এরপর অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ জাপানি মুদ্রা, বাংলাদেশি ২৮ হাজার টাকা, দু’টি আইফোন, দুটি ক্রেডিট কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলথ কার্ড, একটি পোর্টেবল হটস্পট ও একটি ব্লুটুথ ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে কাউকে কিছু না জানিয়ে হোটেলে চলে যান ভুক্তভোগীরা। পরদিন তারা বিষয়টি হোটেলের ব্যবস্থাপককে জানালে তিনি মোহাম্মদপুর থানা অবহিত করেন।
উপকমিশনার জানান, ২৫ এপ্রিল মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হওয়ার পর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এ সময় আশেপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তায় জড়িত চক্রটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। প্রথমে ২৭ এপ্রিল মোহাম্মদপুর বোটঘাট এলাকা থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত খাইরুল ইসলাম স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে রায়েরবাজার শুটকি আড়তের পেছনের কবরস্থানের দেয়াল সংলগ্ন মাঠ থেকে জাপানি নাগরিকের পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলথ কার্ড, দুটি ক্রেডিট কার্ড ও একটি পাসপোর্ট ছেঁড়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, অপর দুই ছিনতাইকারী কক্সবাজারে বেড়াতে গেছে। তখন পুলিশের একটি দল যায় কক্সবাজার। ততক্ষণে ছিনতাইকারীরা চলে যায় সীতাকুণ্ড। সেখান থেকে গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া একটি আইফোন, ৩০ হাজার জাপানি ইয়েন, একটি পোর্টেবল হটস্পট ও একটি ব্লুটুথ উদ্ধার করা হয়।
উপকমিশনার বলেন, লুণ্ঠিত একটি আইফোন এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি। সেটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আর লুণ্ঠিত জাপানি ইয়েনের মধ্যে ৩০ হাজার উদ্ধার হলেও বাকিটা তারা টাকায় বদলে খরচ করে ফেলেছে। গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে আবু রাসেল প্রত্যয়ের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনের একটিসহ মোট তিনটি মামলা আছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল, সহকারী কমিশনার আজিজুল হক, মোহাম্মদপুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান, তদন্তসংশ্লিষ্ট এসআই প্রদীপ কুমার সরকার, মো. নাজমুল ও মো. মাজেদুল।