সপ্তাহ পেরিয়ে অষ্টম দিনে এসে পৌঁছেছে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। একে অপরকে লক্ষ্য করে এখনও একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দুদেশই। ইসরায়েলের অবিরাম হামলায় একদিকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস হচ্ছে ইরানের, অন্যদিকে প্রাণ হারাচ্ছে শত শত মানুষ। এর মধ্যেও ইসরায়েলি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত আছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায়।
জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের কঠিন সমালোচনা স্বত্ত্বেও থামার নাম নেই ইসরায়েলের। ‘পরম বন্ধু’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ধরাকে সরা জ্ঞান করে যাচ্ছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু; উত্তপ্ত করে তুলেছেন পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে। হামাসকে উৎখাতের বাহানায় যেমন গাজায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি, তেমনি ইরানে সম্প্রতি শুরু হামলার পেছনে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন ইরানের পরমাণু কর্মসূচি থামানোর প্রয়োজনকে।
তবে, বাস্তবে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলা, জোরপূর্বক উচ্ছেদ এবং বেসামরিক জনগণের ওপর সহিংসতার ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাড়িয়ে তুলেছে উদ্বেগ।
এমন প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলকে আবারও কালো তালিকাভুক্ত করেছে জাতিসংঘ। খবর আল জাজিরার।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবারও সংঘাতকালীন সময়ে শিশুদের বিরুদ্ধে গুরুতর সহিংসতার অভিযোগে জাতিসংঘের কালো তালিকায় নাম উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া হয়ে ওঠা দেশটির।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো হামলায় অভূতপূর্ব মাত্রায় শিশুদের ওপর সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় জাতিসংঘের বার্ষিক প্রতিবেদনে। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় বছর এই তালিকায় নাম লেখালো ইসরায়েল।
‘চিলড্রেন ইন আর্মড কনফ্লিক্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ১৮ বছরের নিচে শিশুদের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালে ৪১ হাজার ৩৭০টি গুরুতর সহিংসতা জাতিসংঘ যাচাই করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি।
জাতিসংঘ বলছে, ২০২৪ সালে গাজায় ১ হাজার ২৫৯ শিশু নিহত এবং ৯৪১ জন শিশু আহত হয়েছে। আরও ৪ হাজার ৪৭০ শিশুর মৃত্যুর তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়া অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে ৯৭ শিশু; সেখানে ৩ হাজার ৬৮৮টি সহিংসতা নথিভুক্ত হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেন, অবরুদ্ধ গাজা ও ইসরায়েল অধিকৃত ভূখণ্ডে শিশুদের ওপর সহিংসতার মাত্রা আমাকে স্তম্ভিত করেছে। বিস্ফোরক অস্ত্রের ব্যবহার জনবহুল এলাকায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু থেকে হামলা বিরত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তিনি। তবে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি এখনও।