
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠক সফল হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সবকিছু যে একটা অনিশ্চিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল, সেই অবস্থাকে কাটিয়ে জাতিকে আবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন দুই নেতা।
এই বৈঠকে সফল হওয়ার মাধ্যমে তারেক রহমান তাঁর রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণ প্রমাণ করেছেন বলেও উল্লেখ করেছেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘চতুর্দিকে একটা অনিশ্চয়তা ছিল এবং অনেকে অনেক কথা বলছিল বিভিন্নভাবে। আজকে এই দুই নেতা প্রমাণ করলেন যে বাংলাদেশের মানুষ এখনো প্রয়োজনের সময় ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, নেতারা নেতৃত্ব দিতে পারে।’
আজ শুক্রবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমান। ওই বৈঠক শেষে দুই পক্ষের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারেক রহমানের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সব প্রস্তুতি শেষ করা গেলে ২০২৬ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও (ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে) নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
এই বক্তব্য আসার পর বিকেলে গুলশানে বিএনপির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান সাহেব আবার প্রমাণ করলেন যে তিনি বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে, এই দলগুলোর যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন…তাঁদের মধ্যে নিঃসন্দেহে রাষ্টনায়কোচিত যে গুণগুলো তাঁর মধ্যে রয়েছে, সেই গুণ তিনি প্রমাণ করেছেন। প্রথম একটি বৈঠক যেটা সত্যিকার অর্থে গোটা জাতি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিল, সেই বৈঠকটিতে তিনি আল্লাহর হুকুমে সফল হয়েছেন।’
দলের নেতা–কর্মীদের পক্ষ থেকে তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘তিনি (ইউনূস) অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে এই সভাটিতে জনাব তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে, সবকিছু যে একটা অনিশ্চিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল, সেই অবস্থাকে কাটিয়ে জাতিকে এই দুই নেতা আবার সামনের দিকে আশা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাল।’
এই বৈঠকের ফলাফল জানতে গোটা জাতি উৎকণ্ঠার সঙ্গে অপেক্ষা করেছিল উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বৈঠকে যে বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে প্রধান ছিল নির্বাচন ইস্যু। সে নির্বাচন ইস্যুতে জনাব তারেক রহমানের যে প্রস্তাব, যে নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে এপ্রিলে, যেটা প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেছেন, সেটা উপযুক্ত সময় নয় বিধায় তাকে পিছিয়ে (বস্তুত এগিয়ে) নিয়ে আসা এবং সেই ক্ষেত্রে গোটা জাতি আনন্দের সঙ্গে লক্ষ করল যে আপনার এইটাতে প্রধান উপদেষ্টা সম্মত হয়েছেন এবং তাঁরা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন।’
এই বৈঠক সত্যিকার অর্থে একটি ‘টার্নিং পয়েন্টে’ (বাঁকবদলের কেন্দ্র) পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এখন প্রয়োজন অতীতের কথা ভুলে গিয়ে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নির্বাচন দিয়ে জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা। বিগত ১৫ বছরে ‘ফ্যাসিস্টদের’ করা ধ্বংসস্তূপকে গণতান্ত্রিক কাঠামোতে রূপান্তরিত করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গণতান্ত্রিক উত্তরণের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে চলেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্র কিন্তু একটা দিনের ব্যাপার নয়। গণতন্ত্র হচ্ছে একটা চর্চার বিষয়। এটা একটা কালচার (সংস্কৃতি)। এই কালচার আমাদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে।’