পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) অ্যানাটমি অ্যান্ড হিস্টোলজি বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমানের তত্ত্বাবধানে একদল শিক্ষার্থী জলহস্তীর হাড় জুড়ে একটি কঙ্কাল প্রস্তুত করেছেন। ১১ মাস সময় নিয়ে কাজটি তাঁরা কেন করলেন, সাইদুর রহমানের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ফুয়াদ পাবলো।
এই কাজটি কী কারণে গুরুত্বপূর্ণ?
বায়োমেডিকেল সায়েন্সে কঙ্কাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা মানুষের চিকিৎসা করেন, তাঁদেরও কিন্তু মানুষের কঙ্কাল নিয়ে পড়ালেখা করতে হয়। কেননা কঙ্কালের মাধ্যমেই শরীরের কোন অংশ কোথায় অবস্থিত, জানার সুযোগ হয়ে থাকে। হাড়, হাড়ের গঠন ও আকৃতি জানার জন্যও কঙ্কাল খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া বিভিন্ন রোগ ও মৃত্যুর কারণ, প্রজাতির ভিন্নতাসহ নানা অ্যানাটমিক্যাল ও অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। দেশে যেহেতু জলহস্তীর কঙ্কাল এই প্রথম প্রস্তুত করা হয়েছে, আশা করি, এটি পরে অনেকের কাজে লাগবে।
জলহস্তী কোথায় পেলেন?
আমরা যে জলহস্তীর কঙ্কাল প্রস্তুত করেছি, সেটি ছিল রংপুর চিড়িয়াখানায়। অনেক বয়স্ক ছিল, বার্ধক্যের কারণেই মারা গেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে আমরা জলহস্তীর মৃতদেহটি এখানে নিয়ে আসি। এটি মারা যাওয়ার পর ১০ ফুট মাটির নিচে চাপা দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে সেটা উত্তোলন করাও বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। তুলে আনার পর নিয়ম মেনে আমরা হাড়গুলো আলাদা করে ফেলি। পরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটিকে বর্তমান রূপ দিয়েছি।
এই প্রকল্পে আপনার সঙ্গে কতজন শিক্ষার্থী যুক্ত ছিলেন?
প্রথম থেকেই বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিল। যেহেতু এটা রংপুর থেকে আনা হয়েছে, সেহেতু রংপুরের স্থানীয় কিছু শিক্ষার্থী উত্তোলনের সময় সাহায্য করেছে। আমাদের বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে এবং আরেক শিক্ষক আনোয়ার জাহিদের নির্দেশনায় এটি আনা হয়। বিভিন্ন বর্ষের বেশ কয়েকজন ছাত্র সাহায্য করেছে। কিন্তু একদম শেষ পর্যন্ত ছিল পাঁচজন। আমার নেতৃত্বে এই পাঁচজনকে নিয়েই মূলত কাজটি করা হয়।
সামনে আর কী পরিকল্পনা?
বিভিন্ন পশুর কঙ্কাল নিয়ে একটি জাদুঘর করার পরিকল্পনা আছে। আমাদের এখানে গরু, ছাগল, ভেড়া, কুকুরের কঙ্কালও আছে। জলহস্তীর কাজটি হওয়ার পর এখন আমরা একটি বাঘের কঙ্কাল তৈরির চেষ্টা করছি। বাঘটিও রংপুর চিড়িয়াখানাতেই মারা গিয়েছিল। এখন প্রক্রিয়াকরণ চলছে। সেন্ট মার্টিন থেকে আমরা বড় একটা কচ্ছপ নিয়ে এসেছিলাম। সেন্ট মার্টিনে বেড়াতে গিয়ে দেখতে পাই, কচ্ছপটি মরে পড়ে আছে। দৈর্ঘ্য ২৫–২৬ ইঞ্চি। শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় মৃতদেহটি পটুয়াখালীতে নিয়ে আসি। যেকোনো জায়গায় কোনো পশুর মৃতদেহ পেলেই আমরা সেটা সংগ্রহ করতে চাই। যদিও কাজটি অনেক ক্ষেত্রে বেশ ব্যয়বহুল। প্রশাসন থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেলে আমাদের জন্য বেশ উপকার হয়। জাদুঘর করা অত সহজ নয়। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে যে জাদুঘর করা হয়েছে, সেখানে বিভিন্ন ধরনের পোর্ট্রেট আছে। সেটাও কিন্তু একটা বড় প্রকল্প।