জয়সদনে প্রধানমন্ত্রীর অন্যরকম একদিন

0
147
শ্বশুরবাড়ি এসে স্বজনদের সঙ্গে জয়সদন ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

দীর্ঘদিন পর শ্বশুরবাড়িতে অন্যরকম একটি দিন কেটেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। নাতি-নাতনিসহ শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কুশল বিনিময়, একান্ত আলাপচারিতা, সেলফি তোলা, খাওয়া-দাওয়ায় কেটে গেছে প্রায় একটি ঘণ্টা। এ সময় পরিবারের সবাইকে নিয়ে স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করেন তিনি। তাঁকে একান্ত কাছে পেয়ে রংপুরের পীরগঞ্জে লালদীঘি ফতেহপুরের মিয়া পরিবারের সদস্যদেরও ছিল একটি আনন্দ-উৎসবের স্মরণীয় দিন।

গত মঙ্গলবার সকালে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নেমে সড়কপথে তারাগঞ্জের নির্বাচনী জনসভা, মিঠাপুকুরের পথসভা শেষে দুপুরে শ্বশুরবাড়ি পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বরে নির্বাচনী জনসভায় যোগদানের আগে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন তিনি। ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর লালদীঘির ফতেহপুরে শ্বশুরবাড়ি এসে জয়সদনে কর্মীসভা করেন প্রধানমন্ত্রী।

দীর্ঘ পাঁচ বছর পরে হলেও মিয়া পরিবারের বধূমাতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জয়সদনে নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে মিলিত হন। ফতেহপুরে পৌঁছে পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত প্রয়াত স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করেন। এরপর লাল গালিচার ওপর দিয়ে নিজের বাসভবন জয়সদনে প্রবেশ করেন। এসময় শ্বশুরবাড়ির পরিবারের সদস্যরা গোলাপ ফুল দিয়ে তাকে বরণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী জোহরের নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে দুপুরের খাবার খান।

প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানীর মরহুম বড় ভাই আব্দুল খালেক মিয়ার বড় ছেলে ও রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছায়াদত হোসেন বকুল জানান, বধূমাতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনের খবরে আগে থেকেই নিকটাত্মীয়রা বাড়িতে এসে ভিড় করেন। প্রধানমন্ত্রী এখানে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থানকালে পরিবারের সবাইকে নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয় জয়সদনে। মহা আনন্দে পরিবারের ভাতিজি, ভাতিজা বৌ, নাতি-নাতনিরা প্রধানমন্ত্রীর জন্য পিঠা-পুলিসহ নানা পদের দেশীয় খাবারের আয়োজন করেন।

তিনি জানান, বিভিন্ন প্রজাতির টেংড়া, ময়া, গচি, শিং, মাগুর, কই, চিংড়ি, বোয়াল, রুই, কাতলা, আইড় মাছসহ ১১ পদের মাছ রান্না করা হয়। ছিল গরু, খাসি, মুরগি, হাঁস, কবুতরসহ পাঁচ পদের মাংস। প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের খাবার হিসেবে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খাবার সিঁদল, কুমড়া বড়া, আলু, টমেটো, টাকি মাছ মিলে পাঁচ পদের ভর্তাসহ শাক, মাছের চচ্চড়ি, পুলি পিঠা, তেল পিঠা, রসবড়া, পায়েস, পুডিং, খেজুর গুড়ের মিষ্টিসহ বাহারি আইটেমের খাবার পরিবেশন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে পাশে নিয়ে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন।

দুপুরের খাবারের পর পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক সময় কাটান প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে একান্তে পেয়ে আনন্দ-উৎসাহে মেতে ওঠেন পরিবারের সদস্যরা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর স্বামী প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানীর মরহুম বড় ভাই আব্দুল খালেক মিয়ার বড় ছেলে ও জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছায়াদত হোসেন বকুল (ভাতিজা), বকুলের সহধর্মীনি রোকসানা বকুল (ভাতিজা বৌ) ও মেয়ে শাবাবা হোসেন অহি (নাতনি), বকুলের অপর তিন ভাইয়ের স্ত্রী শামিম সাজ (ভাতিজা বৌ), ফেরদৌসি বেগম (ভাতিজা বৌ), সেলিনা ইয়াসমিন (ভাতিজা বৌ), মরহুম খালেক মিয়ার দুই কন্যা খুকুমনি (ভাতিজি), মনিরা (ভাতিজি), মনিরার স্বামী মাজহারুল ইসলাম (ভাতিজি জামাই), প্রয়াত বিজ্ঞানীর অপর বড় ভাই মরহুম আব্দুল ওয়াহেদ কানু মিয়ার দুই ছেলে ইঞ্জিনিয়ার সাইদ রেজা শান্তু (ভাতিজা), সাইদ রেজা নানতু (ভাতিজা), কন্যা আইরিন ও মুক্তি (ভাতিজি), আইরিনের স্বামী আমিরুল ইসলাম (ভাতিজি জামাই), প্রয়াত ওয়াজেদ মিয়ার নাতনি গাইবান্ধা সদর আসনের এমপি মাহবুব আরা বেগম গিনিসহ মিয়া পরিবারের অনেক আত্মীয় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন বার্তা পেয়েই মিয়া পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে আপ্যায়নে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খাবারে বাহারি পদের আয়োজনের পাশাপাশি বাড়ির উঠান ও বাগান সুসজ্জিত করে রাখেন। সড়কপথে নির্মাণ করেন তোরণ, সাঁটানো হয় ফেস্টুন। জয়সদনের বিল্ডিং বাহির ও ভিতরে নতুন করে রঙ করা হয়। বাড়ির উঠান এবং উঠানের বাগান দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো হয়। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহেনা বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে আসার কারণে পরিবারের সদস্যদের মাঝে বাড়তি আনন্দ দেখা দেয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.