জম্মু–কাম্মীরে কেন নির্বাচন দিতে চায় না বিজেপি

0
92
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে কেন্দ্রীয় শাসন জারি করার পাঁচ বছর পূর্ণ হলো। এখনো বিধানসভা নির্বাচনের খবর নেই

জম্মু–কাশ্মীরের কেন্দ্রীয় শাসনের বয়স পাঁচ বছর হয়ে গেল। অথচ এখনো স্পষ্ট নয়, নির্বাচন কবে হতে পারে।

সর্বশেষ জম্মু–কাশ্মীর বিধানসভার ভোট হয়েছিল ২০১৪ সালে। সেই বছর ২৫ নভেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর—পাঁচ পর্যায়ে ভোট হয়। জম্মু–কাশ্মীর তখন পূর্ণাঙ্গ রাজ্য ছিল। ফলাফল ঘোষণার পর পিডিপি ও বিজেপি হাতে হাত মিলিয়ে জোট সরকার গঠন করে। মুখ্যমন্ত্রী হন পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বিজেপি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে সরকারের পতন ঘটে। পরদিন থেকে শুরু হয় কেন্দ্রীয় শাসন।

আজ সোমবার ২০ জুন সেই অর্থে কেন্দ্রীয় শাসনের পঞ্চম বর্ষপূর্তি। এই সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা হারিয়েছে জম্মু–কাশ্মীর, দ্বিখণ্ডিতও হয়েছে। জম্মু–কাশ্মীর উপত্যকা নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি কেন্দ্রশাসিত এলাকা, দ্বিতীয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ওই সিদ্ধান্ত ছাড়াও কেড়ে নেওয়া হয় সাবেক রাজ্যটির বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা। খারিজ করে দেওয়া হয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ।

জম্মু–কাশ্মীরের বিধানসভার বিলোপ অবশ্য ঘটানো হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রতিশ্রুতিও বারবার দিয়েছে, পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে বিধানসভার ভোট হবে। রাজ্যের মর্যাদাও ফিরিয়ে দেওয়া হবে। পাঁচ বছর কেটে গেলেও সেই দুই প্রতিশ্রুতির একটিও এখনো পূরণ হয়নি।

উপত্যকার রাজনৈতিক দলগুলো এখনো দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। বিরোধীদের জোট ‘গুপকর অ্যালায়েন্সের’ সব নেতাই অবিলম্বে নির্বাচনের দাবি করেছেন।

ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহর অভিযোগ, ভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার বুঝতে পারছে, ভোট হলে বিজেপির পরাজয় অনিবার্য।

ভোটের দাবিতে বিরোধীদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে বিজেপিও। গত রোববার শ্রীনগরে এক সমাবেশে দলের সভাপতি রবীন্দ্র রায়না নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করে বলেন, আর দেরি না করে দ্রুত নির্বাচন দিন। তিনি অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ অবান্তর বলে উড়িয়ে দেন।

জন্মু–কাশ্মীরে ভোট কবে হবে, তা যেমন অজানা, তেমনই কারও জানা নেই, সাংবিধানিক মর্যাদা খারিজ ও রাজ্য দ্বিখণ্ডিত করার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল হওয়া মামলার নিষ্পত্তি কবে হবে।

নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি কিন্তু শেষ। সাবেক রাজ্য থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে লাদাখকে। সেখানকার বিধানসভাকেন্দ্রগুলো স্বাভাবিকভাবেই বিধানসভা থেকে বাদ পড়েছে। পাশাপাশি বিধানসভাকেন্দ্রগুলোর সীমানা নতুনভাবে নির্ধারণে তৈরি করা হয় ‘ডিলিমিটেশন কমিশন’। বিরোধীদের আপত্তি উপেক্ষা করে কমিশন অনেক দিন আগে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বিধানসভার মোট আসন বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯০। এর মধ্যে হিন্দুপ্রধান জম্মুতে ছয়টি আসন বাড়ানো হয়েছে, মুসলমানপ্রধান কাশ্মীর উপত্যকায় বাড়ানো হয়েছে একটি। এর ফলে জম্মুর মোট আসন বেড়ে হয়েছে ৪৩, কাশ্মীর উপত্যকায় ৪৭।

বিরোধীদের অভিযোগ, এটা করা হয়েছে, যাতে মুসলমান–অধ্যুষিত জম্মু–কাশ্মীরের শাসনভার হিন্দুদের হাতে যায়, সেই লক্ষ্যে। স্বাধীনতার এত বছর পরও কোনো হিন্দু জম্মু–কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি।

রাজনৈতিক দাবি ও পাল্টা দাবি যা–ই হোক, কেন্দ্রীয় শাসনের পঞ্চম বর্ষপূর্তির দিনেও কেউ আগামী ভোটের ইঙ্গিত দিতে পারেনি। জম্মু–কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা গতকাল রোববার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলে এখন শান্তি, সুস্থিতি ও প্রগতির স্বর্ণযুগ চলছে। সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম কীভাবে কমে গেছে, নিরাপত্তা কত নিশ্ছিদ্র, কত সুন্দরভাবে শ্রীনগরে ‘জি–২০’ পর্যটন সম্মেলন হলো, ব্যবসা–বাণিজ্য কত মসৃণভাবে চলছে, পর্যটকদের ভিড় ক্রমেই কীভাবে বেড়ে চলেছে এবং সাধারণ মানুষ কতটা আশ্বস্ত বোধ করছেন—সেসব কাহিনি সাতকাহন করে জানালেও কবে নাগাদ ভোট হবে, সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিতই তিনি দেননি।

কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ধারণা ছিল, এই গ্রীষ্মে নির্বাচন হবে। তার আগে সরকার চাইছিল শান্ত ও নিরুপদ্রব জম্মু–কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিক আঙিনায় তুলে ধরতে। সেই লক্ষ্যেই জি–২০ সম্মেলনের আয়োজন। কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে শতভাগ নিশ্চিত না হতে পেরে বিদেশি অতিথিদের শ্রীনগরের বাইরে গুলমার্গে নেওয়ার পরিকল্পনা খারিজ করা হয়। বাতিল করা হয় বেশ কিছু কর্মসূচি।

নিরুপদ্রবে জি–২০ সম্মেলন কেটে গেলেও ভোট নিয়ে কোনো ভাবনার কথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানাতে পারছে না। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো কয়েকটি বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারছে না। যেমন—গ্রীষ্মে নির্বাচন করাতে গেলে সেপ্টেম্বর–অক্টোবরের মধ্যে করাতে হবে, জুলাই–আগস্ট বর্ষাকাল, তার পরের দুই–তিন মাসের মধ্যে ভোট হবে চার বড় রাজ্যে—তেলেঙ্গানা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়। ওই সময়ে ভোট হবে মিজোরামেও। এসব রাজ্যের সঙ্গে জম্মু–কাশ্মীরের ভোটও কি করানো উচিত হবে?

এই প্রশ্ন ঘিরে দোলাচল রয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, আগামী বছর লোকসভা ভোটের আগে জম্মু–কাশ্মীরে ভোট করানো ঠিক হবে না। কারণ, বিরোধীরা সেখানে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গড়লে সরকারের যাবতীয় দাবি ও বিজেপির রাজনৈতিক অভিসন্ধি বিফলে যাবে। কাশ্মীরের আন্তর্জাতিকীকরণও হবে নতুনভাবে। অতএব অপেক্ষাই ভালো। তা ছাড়া, এত কিছুর পরও জম্মু–কাশ্মীরে বিজেপি ক্ষমতাসীন হতে না পারলে কাশ্মীর–নীতির যথার্থতা নিয়ে দলে প্রশ্ন উঠবে।

জম্মু–কাশ্মীর বিধানসভার নির্বাচন এবং পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফেরত পাওয়ার প্রশ্ন দুটি কেন্দ্রীয় শাসনের পাঁচ বছর কেটে যাওয়ার পরও ঝুলে থাকছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.