জনপ্রিয়, স্বচ্ছ এবং পরিচ্ছন্ন ইমেজ বিবেচনায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমার কাছে সবার প্রতিবেদন রয়েছে। জনপ্রিয়তা ও দক্ষতা দেখেই প্রার্থী করা হবে। মুখ দেখে নয়, জয়লাভের সক্ষমতা আছে এমন নেতারাই মনোনয়ন পাবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দেশে আবারও একটি অনির্বাচিত সরকার আনার জন্য দেশি-বিদেশি চক্রান্ত হচ্ছে। যে কোনো মূল্যে এ চক্রান্ত প্রতিহত করা হবে।’
নেতাকর্মীকে সর্বাত্মক নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী নির্বাচন খুবই চ্যালেঞ্জিং। এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসা সহজ হবে না। এ জন্য আগেভাগেই দলকে সবদিক থেকে গোছানো ও শক্তিশালী করতে হবে। সব ফোকাস থাকবে নির্বাচনে। এর আগে নতুন করে দলের কোনো তৃণমূল সম্মেলন হবে না। তবে যেগুলো তারিখ নির্ধারিত, সেগুলো হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিতে আওয়ামী লীগ উদ্বিগ্ন নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে এবং তা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। অতীতের মতো কেউ এ নির্বাচন ঠেকাতে, ভোটকেন্দ্র পোড়াতে কিংবা সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করতে এলে, ভিসা নীতি তাদের বিরুদ্ধেই যাবে। ফলে এখন যারা ভিসা নীতি নিয়ে এত উৎসাহী, লাফালাফি করছে, বিপদে তারাই পড়বে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঞ্চালনায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিসহ প্রায় ছয় ঘণ্টা কার্যনির্বাহী সংসদের এ বৈঠক হয়। দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে দলের আট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক– আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও সুজিত রায় নন্দী তাঁদের বিভাগের সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন।
বৈঠকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে দল ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে করা জরিপের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোথায় কার অবস্থা কেমন, জয়লাভের সম্ভাবনা, জনপ্রিয়তা, ব্যক্তিগত ইমেজ সবই জরিপে উঠে এসেছে। জনবিচ্ছিন্ন ও নেতিবাচক ইমেজের কেউ মনোনয়ন পাবেন না। মানুষের পাশে থেকে যাঁরা কাজ করবেন, তাঁরাই সুযোগ পাবেন। এ জন্য এখন থেকেই এলাকায় যেতে হবে, দল ও নৌকার ভোট বাড়াতে হবে। স্থানীয় পর্যায় থেকে সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।
সব ধরনের কোন্দল নিরসনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনো রকম দ্বন্দ্ব-কোন্দলে জড়ানো যাবে না। কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা বিভেদ থাকলে এগুলো সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে। মনোনয়নপ্রত্যাশীর নিজ দলীয় বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যাবে না। এমপিদের বিরুদ্ধে কথা বলা মানে দলের বিরুদ্ধে কথা বলা, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা। কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়নের কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারী কিংবা সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী কেউ দলের কোনো পদপদবিতে আসতে পারবেন না। কমিটিতে নতুনদের পাশাপাশি পুরোনো ও ত্যাগী নেতাদের আনতে হবে।
বৈঠকের এক পর্যায়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের মধ্যে তুমুল বিতণ্ডা হয়। বাহাউদ্দিন নাছিম তাঁর বক্তব্যে শাজাহান খানের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসী বাহিনী লালনপালনের’ অভিযোগ করলে এ বিতণ্ডা হয়। এ সময় বাহাউদ্দিন নাছিমের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তুমিই তো তাকে (শাজাহান খান) দলে আনতে সবচেয়ে বেশি উৎসাহিত করেছ। এখন কেন তার বিরুদ্ধে বলছ?’ পরে দলীয় প্রধানের হস্তক্ষেপে দুই নেতাই শান্ত হন।
মধ্যাহ্নভোজে গণভবন কমপ্লেক্সে নিজের উদ্যোগে উৎপাদিত শাকসবজি ও মাছ দিয়ে নেতাদের আপ্যায়ন করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ২১ আগস্ট হত্যা দিবসসহ বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে দলের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়।