চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর বছরের প্রথম ছয় মাসে এত মৃত্যু আগে কখনও দেখা যায়নি। এডিস মশাবাহিত এ রোগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিন, এপ্রিলে দুই, মে মাসে দুই এবং গত মাসে ৩৪ জনের প্রাণ গেছে। করোনা মহামারিকালে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যেভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারকে তাগিদ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ১ হাজার ১১১ জনের। ওই বছর জুনে প্রথম ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে বছর শেষে ২৮১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ডেঙ্গুতে এটি এক বছরে দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যু। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে ১০০ জন আক্রান্ত হন। তবে প্রথম ছয় মাসে কেউ মারা যাননি। ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২০৮।
মারা গিয়েছিলেন সাতজন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অন্যসব বছরকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মহামারি প্রতিরোধের মতো জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ তাঁদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ডেঙ্গুতে ৮ হাজার ২৪৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬ হাজার ৭৯৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৫ হাজার ২৭৩ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৫২০ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন। শুধু জুনে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৯৫৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় বসতবাড়িতে এবার বর্ষা মৌসুমে আগেই এডিস মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। গত বর্ষা মৌসুমের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি বাড়িতে এ লার্ভা পাওয়া যায়। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় হাসপাতালে আলাদা প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। আইইডিসিআরের প্রধান উপদেষ্টা জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলেন, করোনা মহামারি রোধে যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, ডেঙ্গু ঠেকাতে একইভাবে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। কিন্তু সেই তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর চাপ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে অনেক রোগী মেঝে ও করিডোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পাশাপাশি অন্য রোগীদেরও সেবা দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, সামান্য জ্বর নিয়েও ডেঙ্গু হচ্ছে। আগে বলা হতো, পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলে এবং জ্বর সেরে যাওয়ার পরই কেবল জটিলতা শুরু হয়। এবার দেখা যাচ্ছে, জ্বরের শুরুতেই বা দ্বিতীয়, তৃতীয় দিনেও জটিলতা নিয়ে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।