ছয় পণ্যের ঋণপত্র খুলতে ডলারের কোটা চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

0
125
ডলার, ছবি: সংগৃহীত

চিঠিতে আরও বলা হয়, বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা’–সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভায় অত্যাবশ্যকীয় ছয়টি পণ্যের (ভোজ্যতেল, পরিশোধিত চিনি, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুর) আমদানি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে কয়েকটি পণ্যের আমদানি ঋণপত্র খোলা সন্তোষজনক পরিস্থিতিতে না থাকায় জরুরি ভিত্তিতে আমদানি নিশ্চিতের পদক্ষেপ নিতে হবে। ওই সভার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, রমজানে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ছয়টি পণ্যের ঋণপত্র খোলার পরিমাণ বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে ব্যাংকগুলোকে ইতিমধ্যে নিত্যপণ্যের ঋণপত্র খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নতুন করে সরকার কিছু ভেবে থাকলে সেই সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।’

‘বাজারে পণ্যের সংকট থাকলে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে নেন। সুতরাং, নিত্যপণ্যের যাতে সংকট না হয়, সে জন্য সরকারকে নিয়মিতভাবে ঋণপত্র খোলা ও সরবরাহব্যবস্থা তদারক করতে হবে।’গোলাম রহমান, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তথ্যে দেখা গেছে, গত তিন মাসে (অক্টোবর–ডিসেম্বর) অপরিশোধিত চিনি, অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল, সয়াবিন বীজ, ছোলা ও খেজুরের আমদানি ঋণপত্র খোলা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে অপরিশোধিত পাম তেল ও সয়াবিন বীজ আমদানির ঋণপত্র।

অথচ নিত্যপণ্যের আমদানির ঋণপত্র খোলা স্বাভাবিক রাখতে গত কয়েক মাসে দফায় দফায় পরিপত্র জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তা সত্ত্বেও নিত্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলা কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিক অক্টোবর-ডিসেম্বরে অপরিশোধিত চিনি আমদানির ঋণপত্র খোলা আগের বছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ কমেছে। অন্য পণ্যগুলোর মধ্যে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলে ৪৭ শতাংশ, সয়াবিন বীজে ৮৩ শতাংশ, অপরিশোধিত পাম তেলে ৯৯ শতাংশ, ছোলায় ৪৭ শতাংশ ও খেজুরে ৩০ শতাংশ কমেছে।

আমদানি ঋণপত্র খোলা কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে দেশে পণ্য আমদানি কম হবে। এতে বাজারে পণ্যের সংকট দেখা দিতে পারে। ইতিমধ্যে বাজারে কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে সেই প্রভাব দেখা যাচ্ছে। কয়েক মাস ধরে বাজারে চিনির প্রকট সংকট চলছে। আমদানিকারকেরা জানান, ডলার-সংকটের কারণে তাঁরা সময়মতো আমদানি ঋণপত্র খুলতে পারছেন না।

নিত্যপণ্য বিপণনকারী কোম্পানি টি কে গ্রুপের পরিচালক মো. শফিউল আতহার তাসলিম বলেন, নতুন করে বাংলাদেশ ব্যাংক নিত্যপণ্য আমদানির ঋণপত্রের ব্যাপারে যেসব সুবিধার কথা বলেছে, এর প্রায় সবই আগেও চালু ছিল। এতে সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপণ্যের ঋণপত্র খোলায় বড় কোনো গতি আসেনি। একটি ঋণপত্র খোলার পর পণ্য আমদানি হতে অনেক ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন মাসও লেগে যায়। তাই নিত্যপণ্যের ঋণপত্র খোলার পরিমাণ বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে ঋণপত্র খোলা কমে যাওয়ার পাশাপাশি অপরিশোধিত চিনি ও পাম তেল এবং ছোলা ও খেজুরের ঋণপত্র নিষ্পত্তির হারও কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে অপরিশোধিত চিনি আমদানি কমেছে দুই লাখ টনের বেশি। আর অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি কমেছে এক লাখ টনের বেশি।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘বাজারে পণ্যের সংকট থাকলে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে নেন। সুতরাং, নিত্যপণ্যের যাতে সংকট না হয়, সে জন্য সরকারকে নিয়মিতভাবে ঋণপত্র খোলা ও সরবরাহব্যবস্থা তদারক করতে হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.