ছুটির দিনে অফারের ছড়াছড়ি বাণিজ্যমেলায়

0
141
বাণিজ্যমেলা

শুরুর প্রথম সপ্তাহেও জমে ওঠেনি ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৮তম আসর। হাঁকডাক করেও ক্রেতা টানতে পারেনি মেলার ব্যবসায়ীরা। যাতায়াত ব্যবস্থাসহ মেলার অভ্যন্তরীণ সার্বিক নিরাপত্তা থাকার পরও এখনও স্টল নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেকে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এবার ২১ দিন পর শুরু হওয়ার প্রভাবে ক্রেতা নাই। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) ছুটির দিন কিছুটা বাড়তে পারে ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা আশা ব্যবসায়ীদের।

বিভিন্ন কোম্পানির বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, প্রতিবছরই মেলা উপলক্ষে সব ধরনের পণ্যে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। ফলে স্টল-প্যাভিলিয়নে ছুটে আসেন গ্রাহকরা।

প্রতিবার মেলায় বেচা-বিক্রি বাড়ানোর জন্য বিক্রেতারা নানা অফার দিয়ে থাকেন। কোনো কোনো বিক্রেতা একটি পণ্যের সঙ্গে একটি পণ্য ফ্রি দিচ্ছেন। অনেকে তাদের পণ্য প্যাকেজ (১টির সঙ্গে ৫/১০ গিফট) আকারে বিক্রি করছেন। আবার কেউ কেউ পণ্যের মূল্যের উপর সরাসরি ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছেন।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জয়িতা ফাউন্ডেশনের বিক্রেতা মরিয়ম আক্তার জানান, শুরু থেকেই বিক্রি ভালো হচ্ছে। তাদের নারী ক্রেতার সংখ্যা বেশি। সময় যত গড়াবে তাদের বিক্রি আরও বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অ্যালুমিনিয়ামের বিশাল পণ্যের সমাহার নিয়ে বসা দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের বিক্রেতা আমির হোসেন বলেন, এখনও তেমন বেচাকেনা নেই। মাসের শেষের দিকে অনেকের হাত খালি। আমরা আশা করছি, আগামী মাসের শুরু থেকে বেচাকেনা খুব ভালো হবে।

নাদিয়া ফার্নিচারের এক্সিকিউটিভ মারুফ হাসান জানান, তাদের সব পণ্যে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নগদ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকার ভেতরে হোম ডেলিভারি সম্পূর্ণ ফ্রি। ক্রেতা না পাওয়ায় বিক্রি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

ঢাকার আগারগাঁওয় বেচাকেনা ভালো ছিল জানিয়ে আক্তার ফার্নিচারের এক্সিকিউটিভ শাহিন হাসান বলেন, সেখানে আমরা সুবিধা মতো দ্বিতল বা বহুতল ভবন তৈরি করে নিতে পেরেছি। কিন্তু এখানে সে সুযোগ নেই। ফলে চাইলেও আমাদের সব পণ্য ডিসপ্লে করে কাস্টমারদের দেখাতে পারছি না।

কারা অধিদপ্তরের ডেপুটি জেলার জালাল হোসেন বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও কারাগারে কাঠ, বাঁশ, দড়ি ও পাট দিয়ে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছি। আমাদের পণ্যের মান অনেক ভালো এবং দামে কম। ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে যেসব পণ্য আমরা বিক্রি করছি, বাইরে সেগুলোর দাম তিন থেকে চার গুণ বেশি।

গাজীপুর বোর্ড বাজার থেকে মেলায় আসা তামান্না আক্তার ও তার মা বলেন, পণ্যের মান ভালো এবং দাম অনেকটা সহনীয় মনে হচ্ছে। অনেক পণ্য কিনেছি। আরও কয়েকবার আসব।

মেলায় দায়িত্বরত কর্মী ও ছাত্রলীগ নেতা নিরব হাসান বলেন, সকালে খুব একটা লোক আসে না। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করেছেন দলে দলে।

রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, এবার মেলায় যাতায়াতে চারদিক থেকে বিআরটিসি বাসসহ গণপরিবহন রয়েছে। ফলে খুব সহজে মেলা ঘুরে যেতে পারেন যে কেউ। ফলে গত বছরের চেয়ে ভালো সারা পাওয়া যাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম আহসান বলেন, বর্তমানে ২৬ একর জায়গার ওপর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আরও ৯ একর জায়গা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। বাণিজ্য মেলায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা নজরদারি চালাচ্ছেন।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যু‌রোর সচিব বিবেক সরকার বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পরিবেশ সুষ্ঠু, নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে শুরু হয় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৮তম আসর। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইবিপি) সূত্রে জানা গেছে, এ বছর দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মোট ৩৩০টি, যা গত বছর ছিল ৩৩১টি। এবারের মেলায় ভারত, পাকিস্তান, হংকং, তুর্কিসহ অন্তত ১৮ থেকে ২০টি দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। এ আসরে মেলার প্রধান ফটকটি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেলের আদলে। গত আসরে মেলার বড়দের প্রবেশ ফি ৪০ টাকা থাকলেও এবার তা ৫০ টাকা করা হয়েছে। আর শিশুদের প্রবেশ ফি ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা ধরা হয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রবেশ ফ্রি করা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.