ছাত্র জনতার আন্দোলনে গুলি: ১২৬ অস্ত্রধারী শনাক্ত, গ্রেপ্তার ১৯

0
20
রাজধানীর তুরাগ থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুরতাফা বিন ওমর। উত্তরার আজমপুর এলাকায়। ৪ আগস্ট

একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে অস্ত্র হাতে গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে যাচ্ছেন এক যুবক। পরে নিশ্চিত হওয়া যায়, ওই যুবক ঢাকা উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ। তিনি সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাতিজা। গত ৪ আগস্ট রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল। সেদিন আসিফের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালিয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ঠিক এক দিন আগে গত ৪ আগস্ট মোহাম্মদপুরে এ রকম আরেকটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। সেদিন মোহাম্মদপুরের বছিলা সড়কেও ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছোড়া হয়েছিল। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ঢাকা উত্তরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের আরেকজন সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান ওরফে রাজীব এবং সাবেক সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের ব্যক্তিগত সহকারী মাসুদুর রহমান ওরফে বিপ্লব আগ্নেয়াস্ত্র হাতে গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে যাচ্ছেন।

গত জুলাই ও আগস্টের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকার যেসব এলাকা উত্তাল হয়ে উঠেছিল, এর মধ্যে মোহাম্মদপুর অন্যতম। এর মধ্যে ১৭–২১ জুলাই এবং ৪ আগস্ট মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বছিলা পর্যন্ত সড়কে অবস্থানকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করা হয়েছিল। আন্দোলন দমন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মোহাম্মদপুর এলাকায় দলবল নিয়ে সক্রিয় ছিলেন সাবেক দুই কাউন্সিলর আসিফ ও রাজীব এবং বিপ্লব। গত ৫ আগস্ট দুপুরের পর তাঁরা আত্মগোপনে চলে যান। এখন পর্যন্ত তাঁদের কাউকেই গ্রেপ্তার করা যায়নি।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ঢাকা উত্তরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের আরেকজন সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান ওরফে রাজীব এবং সাবেক সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের ব্যক্তিগত সহকারী মাসুদুর রহমান ওরফে বিপ্লব আগ্নেয়াস্ত্র হাতে গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে যাচ্ছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে এভাবে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র–জনতার অবস্থান লক্ষ্য করে গুলি করার ঘটনা ঘটেছে রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১২ জেলায়। অন্য জেলাগুলো হলো চট্টগ্রাম, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, রংপুর, জামালপুর, হবিগঞ্জ, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, সিলেট ও লক্ষ্মীপুর। এর বাইরে ঢাকা জেলার সাভার, আশুলিয়া ও কেরানীগঞ্জে ছাত্র–জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছেন আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। এসব ঘটনায় ১২৬ জন অস্ত্রধারীকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকেরা।

ঢাকাসহ দেশের ১২টি জেলায় যে ১২৬ জন অস্ত্রধারীকে শনাক্ত করা গেছে, তার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকেরা নিশ্চিত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে শনাক্ত হওয়া ১০ জন অস্ত্রধারীর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে। ফেনীতে শনাক্ত হওয়া ৩৩ জন অস্ত্রধারীর মধ্যে ১ জনকে, কেরানীগঞ্জে ৪ জনের মধ্যে ১ জনকে এবং সিরাজগঞ্জে ২ জনের মধ্যে ১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৬ জনের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকি ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। অবশ্য অস্ত্রধারীদের সঙ্গে হামলায় অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খান। ৪ আগস্ট

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ছাত্র-জনতার ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাঁরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। অনেকেই নজরদারিতে আছেন। তাঁদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে এভাবে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র–জনতার অবস্থান লক্ষ্য করে গুলি করার ঘটনা ঘটেছে রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১২ জেলায়। অন্য জেলাগুলো হলো চট্টগ্রাম, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, রংপুর, জামালপুর, হবিগঞ্জ, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, সিলেট ও লক্ষ্মীপুর।

চট্টগ্রামে অস্ত্রধারীদের খোঁজ জানে না পুলিশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কিছু নেতা–কর্মীকেও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ছাত্র–জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শী ও ঘটনার সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ১০ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা সবাই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মী।

চট্টগ্রাম শহরে ছাত্র–জনতার আন্দোলন দমনে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা গেছে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী ওরফে বাবরকে। তিনি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া যুবলীগের কর্মী মো. তৌহিদ ও মো. ফিরোজকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা গেছে। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে আরও যাঁরা মহড়া দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী মো. দেলোয়ার।

অস্ত্রধারীদের গত আড়াই মাসেও কেন গ্রেপ্তার করা যায়নি, তা জানতে চাইলে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, থানায় হামলা ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় মাঝখানে অভিযান চালানো যায়নি। অস্ত্রধারীদের বেশির ভাগই গা-ঢাকা দিয়েছেন। এখন অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করে তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

অস্ত্র হাতে চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের কর্মী মো. তৌহিদ। গত ১৮ জুলাই নগরের বহদ্দারহাটে, ছবি: সংগৃহীত

ফেনীতে ৯ জনকে হত্যায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ফেনী শহরের মহিপাল এলাকায় আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা একে-৪৭-এর মতো দেখতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়ছেন। গত ৪ আগস্ট ওই ভিডিওটি ধারণ করা হয়। সেদিন গুলিতে মহিপালে চার শিক্ষার্থীসহ ৯ জন নিহত হন।

ভিডিও ফুটেজে যাঁদের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে, তাঁদের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা হলেন ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জিয়াউদ্দিন বাবলু এবং ফেনী সদরের কাজীরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ।

মহিপাল এলাকা থেকে ধারণ করা কয়েকটি ভিডিও বিশ্লেষণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ৪ আগস্ট মহিপালে অন্তত ৩৩ জনের হাতে বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তাঁদের সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা সবাই ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারীর অনুসারী।

তবে ৩৩ জন অস্ত্রধারীকে চিহ্নিত করা গেলেও গ্রেপ্তার হয়েছেন মাত্র একজন। তিনি হলেন ফেনী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি ওরফে লিটন। তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

যদিও ফেনী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছেন তাঁরা।

ঢাকার মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আন্দোলকারীদের ওপর চড়াও হন ৩৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আসিফ, সংগৃহীত

শামীম ওসমানও গুলি ছুড়েছেন, বৈধ অস্ত্র জমা দেননি

নারায়ণগঞ্জে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিভিন্ন সময় (১৭ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত) প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন ও হামলায় অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা–কর্মী। তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, শামীমের বড় ভাই নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান, শামীমের শ্যালক তানভীর আহমেদ ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজামকে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে।

নারায়ণগঞ্জে অন্তত ১৪ জন অস্ত্রধারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে তাঁদের একজনকেও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জে যেসব অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, শামীমের শ্যালক তানভীর আহমেদ এবং শামীমের ঘনিষ্ঠ শাহ নিজামের অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাঁদের কেউই বৈধ অস্ত্র জমা দেননি।

নারায়ণগঞ্জে অন্তত ১৪ জন অস্ত্রধারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে তাঁদের একজনকেও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

ফরিদপুরে ৩৩ জন চিহ্নিত

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে গত ৩ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিন ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে, ভাঙ্গা রাস্তার মোড়, আলীপুর, হাসিবুল হাসান লাবলু সড়কসহ জেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মী। বিভিন্ন স্থানে তাঁরা ঝাত্র–জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিলেন। যাঁরা অস্ত্র প্রদর্শন করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্তত ৩৩ জনের পরিচয় জানা গেছে।

অস্ত্র প্রদর্শনকারীদের মধ্যে ফরিদপুর পৌরসভার তিনজন সাবেক কাউন্সিলর রয়েছেন। তাঁরা হলেন মোবারক খলিফা, আবদুল হক ও গোলাম মো. নাসির। এ ছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামিদুল রশিদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান এবং যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ মো. সুলতানকেও অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা গেছে। তবে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন ও গুলি ছোড়ার ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি।

অস্ত্র হাতে যুবলীগের কর্মী মো. ফিরোজ। ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর এলাকায়

হবিগঞ্জে ১২ অস্ত্রধারী

গত ৪ আগস্ট হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সামনে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে হামলা চালান তৎকালীন সংসদ সদস্য আবু জাহিরের নেতৃত্বে অন্তত ১২ জন অস্ত্রধারী। সেদিন অস্ত্রধারীদের গুলিতে দুজন নিহত হন। আহত হন বেশ কয়েকজন।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) রেজাউল হক খান বলেন, যাঁরা গুলি ছুড়েছেন, তাঁদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

বিভিন্ন স্থানে তাঁরা ঝাত্র–জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিলেন। যাঁরা অস্ত্র প্রদর্শন করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্তত ৩৩ জনের পরিচয় জানা গেছে।

অস্ত্রধারীরা ধরা পড়ছেন না

প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, সিলেটে ১২ জন, জামালপুরে ৩ জন, সাভারে ২ জন এবং রাজশাহী, লক্ষ্মীপুর ও রংপুরে ১ জন করে অস্ত্রধারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে তাঁদের কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

একইভাবে ঢাকাতেও যেসব অস্ত্রধারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাঁরাও এখন পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। যেমন গত ৪ আগস্ট ঢাকার মিরপুরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র–জনতার ওপর হামলায় অংশ নেন মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম জাহিদ। তিনি যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা। তাঁকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যায়নি।

প্রকৃত অপরাধীদের যাতে দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়, সেটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো নিশ্চিত করবে, ছাত্র–জনতা এমনটিই আশা করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের

এর বাইরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ২ আগস্ট উত্তরার জমজম টাওয়ার এলাকায় অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা যায় ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেনকে। তাঁর সঙ্গে আরও তিনজন অস্ত্রধারী ছিলেন। এ ছাড়া ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হাসান মোল্লাকে অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা গেছে গত ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। এ ছাড়া উত্তরার আজমপুর এলাকায় ৪ আগস্ট অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা গেছে তুরাগ থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুরতাফা বিন ওমরকে। তাঁদের কাউকেই গ্রেপ্তার করা যায়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, পুলিশ এখনো পুরোপুরি সক্রিয় না হওয়ায় অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার-কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। প্রকৃত অপরাধীদের যাতে দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়, সেটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশ এখনো পুরোপুরি সক্রিয় না হওয়ায় অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার-কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। প্রকৃত অপরাধীদের যাতে দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়, সেটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো নিশ্চিত করবে, ছাত্র–জনতা এমনটিই আশা করে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.